মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) থেকে ॥ যশোরের চৌগাছার কাবিলপুর সীমান্তের শতশত কৃষক তাদের জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সীমান্তবর্তী বিজিবি কর্তৃপক্ষ বিকাল ৫টার পর থেকে পরের দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে শতশত কৃষক ও সেচযন্ত্রের মালিকরা পড়েছেন মহাবিপাকে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সীমান্ত বিজিবি কমান্ডার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন সীমান্তবর্তী এলাকার কৃষক ও সেচযন্ত্রের মালিকরা।
সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম কাবিলপুর। গ্রামটির পশ্চিমপাশে ভারত সীমান্ত ঘেষে প্রায় ৪/৫শ বিঘা আবাদি জমি রয়েছে। এখানকার চাষিরা যুগযুগ ধরে তাদের জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে শতশত কৃষক ধানের চাষ শুরু করেছেন। ইরি-বোরো ধান চাষে অন্যতম প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে নিয়মিত সেচ কার্যক্রম ও জমি পরিচর্জা। সেচ কার্যক্রম না চালালে ধান চাষ করা কখনো সম্ভব নয়। ফলে এ কার্যক্রম অব্যহত রাখার জন্য সেচমালিক ও কৃষকদের বাধ্য হয়েই আবাদি জমিতে যেতে হয়। কিন্তু শাহাজাদপুর বিজিবি ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ সীমান্ত এলাকায় প্রতিদিন বিকাল ৫টার পর থেকে পরের দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। দেশের নিরাপত্তা ও সীমান্ত এলাকা সুরক্ষার জন্য এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তিযুক্ত হলেও সীমান্ত এলাকার কৃষকরা পড়েছেন মহা বিপাকে। স্থানীয়রা জানায়, কাবিলপুর পশ্চিমপাড়ার কৃষক জামাত আলীর ৭ বিঘা, সাহেব আলী ৩ বিঘা, শামনুর রহমানের দেড় বিঘা, জয়নুর রহমানের আড়াই বিঘা, বাবু মিয়ার ১ বিঘা, আব্দুল মুজিদের ৬ বিঘা, মুক্তার আলীর ৩ বিঘা জমিসহ শতশত কৃষকের ৪/৫’শ বিঘা জমি রয়েছে। এ সব আবাদি জমিতে সেচ দেয়ার জন্য এলাকার রমজান বিশ্বাস, আবুল কালাম দফাদার, আব্দুস সামাদ, আব্দুর রব ও মুক্তার হোসেনের ৫টি সেচযন্ত্র রয়েছে।
কৃষকরা অভিযোগ করেন, ভারত ঘেষে শুধু কাবিলপুর নয় শতশত গ্রামের সৃষ্টি হয়েছে। তারা ভৌগলিকতার ক্ষেত্রে সীমান্তবর্তী হলেও এখানে তাদের রয়েছে মাঠান জমি ও জমির চাষাবাদ। দেশ স্বাধীনের পর থেকে তারা তাদের জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষ করছেন। হাজার হাজার কৃষকের চাষাবাদ করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে আছে। সন্তানদের লেখাপড়া, পরিবারের চাহিদা মেটানোসহ সব কিছুর একমাত্র ভরসা এই মাঠান জমি। গত এক সপ্তাহ ধরে শাহাজাদপুর বিজিবি ক্যাম্পের পক্ষ থেকে বিকাল ৫টার পর থেকে পরের দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হযেছে। এ অবস্থায় আমরা ধান চাষ নিয়ে মহা সমস্যায় পড়েছি। কৃষকরা বলেন দু’এক দিনের মধ্যে যদি তারা নিয়মিত জমিতে সেচ, সার না দিতে পারেন তাহলে ইরি-বোরো ধানের আবাদ সম্ভব হবেনা। ফলে তাদের বিশাল ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। যা পুষিয়ে ওঠা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। সেচযন্ত্রের মালিকরা জানান, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে রাত ১১টার পর থেকে সেচযন্ত্র চালাতে বলা হয়েছে। এ সময় নিরাবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকে। কিন্তু বিজিবির পক্ষ থেকে নিষেধ করার কারনে তারা ভয়ে মাঠে যেতে পারছেনা। এই পরিস্থিতিতে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শাহাজাদপুর বিজিবি ক্যাম্পে কমান্ডার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বিজিবির পক্ষ থেকে সুবেদার গোলাম সরোয়ার বলেন, দিনের বেলা কৃষকদের বাঁধা দেয়া হচ্ছেনা। সীমান্ত নিরাপত্তার স্বার্থে এবং অবৈধ চোরাচালান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রনের জন্য সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য বিজিবি জোয়ানরা তৎপর। তাই নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে চাষিদের এই নিয়মকে মেনে চলা অবশ্যই জরুরী। অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইবাদত হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন কাবিলপুর সীমান্ত এলাকা থেকে কয়েকজন একটি অভিযোগ দিয়েছেন। তবে আমি বলেছি সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়টি বিজিবির। সেখানে নিরাপত্তজনিত বিষয়ে আমি হস্তক্ষেপ করতে পারিনা।