সেলিম হায়দার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : কেশবপুরের শহীদ ফ্লাইট লেঃ মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজটি এক সময়ের তুখোড় রাজনীতিবীদ মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনের হাত ধরে ১৯৯৭ সালে উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চল হিজলডাঙ্গা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় । প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে কয়েক বছর চলেছে কলেজটি শিক্ষার্থী ঘেরা মনোরম পরিবেশে। কালের বিবর্তনে কলেজটি চলছে নানা সংকট ও অব্যবস্থাপনায়। হারিয়ে যেতে বসেছে কলেজটির প্রতিষ্ঠাকালীন সৌন্দয্য আর সুনাম। এক সময়ের দক্ষিন বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুনাম ধন্য কলেজটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো ইটের গাথুনি এবং টিনের ছাউনি বেষ্টিত যা ২০ বছরেও অপরিবর্তিত রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন জরাজীর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে মনে হয় অভিভাবক শুন্য দেখার মত কেউ নেই। কলেজটি ৪টি বিভাগে বিভক্ত করে চলছে লেখাপড়া। যারমধ্যে এইচএসসি ১৭৩, ডিগ্রী ৩০০, এইএসসি (বিএম)১২৪, কৃষি ডিপ্লোমা ৪০০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এরমধ্যে একটি বিভাগ এইচএসসি এমপিও ভুক্ত বাকীগুলো অদ্যাবধি এমপিও না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে কলেটির শিক্ষক মন্ডলীরা। বছরের পর বছর অতিবাহিত হচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না কোন সরকারি অনুদান। শিক্ষার গুনগত মান এলাকার অন্য কলেজের তুলনায় অনেক এগিয়ে। অর্থশুন্য থাকায় হারিয়ে গেছে হোস্টেলের সেই মনোরম পরিবেশ।
কলেজ সূত্রে জানাযায়, ১৯৯৭ সালে ২ একরের অধিক জমিতে মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন’র হাতদিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তিনি গভার্ণিং বডির সভাপতি হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। এরপর নিজের জমি কলেজের নামে বরাদ্দ দিয়ে ৮০ বিঘার অধিক জমিতে পরিনত করেন। ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর আব্দুল ওহাব সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে ২০০৯ সালে রেজুলেশনের মাধ্যমে পূর্বের সভাপতিকে বাদ দিয়ে সংসদ সদস্য আব্দুল ওহাব কে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরপর মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন হাই কোর্টে একটি রিট করলে রিট আবেদনটি স্থগীত থাকে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে তিনি পুনরায় আর সভাপতি নিযুক্ত হতে পারেনি। নতুন সভাপতি নিযুক্ত হয়ে কলেজটিতে একটি ভবন নির্মানের বাজেট করান এবং সেটি নির্মিত হয় যেটি শুন্য পড়ে রয়েছে। এরপর ২০১৪ সালে পুনরায় গভার্ণিং বডির সভাপতি নিযুক্ত হন মোঃ শামছুর রহমান। অনিয়মের কারনে কলেজটি থেকে কয়েকজন অধ্যক্ষ পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’র দায়িত্ব পালন করছেন উবায়দুর রহমান।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন সভাপতি থাকা কালিন সময় বিভিন্ন জেলা থেকে গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী এই কলেজে ভর্তি হয়েছে। যাদের এ+ অথবা এ- তাদের মাওলানা সাহেব হোস্টেলে ফ্রি থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। তখনকার সময় ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠতো কলেজ ক্যাম্পাস। কিন্তু আজ হোষ্টেলে কোন শিক্ষার্থীরা থাকেনা কারন ফ্রি থাকা খাওয়ার কোন ব্যবস্থা নাই। কলেজের টিনের ছাউনি ভেঙ্গে পড়ছে মেরামত হচ্ছেনা, কে দেখবে এই সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। এলাবাসী আরও আক্ষেপ করে বলেন, মাওলানা সাহেব নিজের জমি অন্যকে দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় যার জমি আছে সেটি নিয়ে কলেজে দিয়েছেন কলেজের শ্রী-বৃদ্ধির জন্য। কিন্তু আজ সেটি নষ্ট হতে চলেছে। এলাকাবাসী আরও জানান, ভেতরে রয়েছে অনেক অনিয়ম আর দূর্ণিতী যা দেখা ছাড়া কিছুই করার নাই। তবে কলেজটি রাজনৈতি ভাবে প্রভাবিত হওয়ায় আজ এই অবস্থা।
কয়েকজন শিক্ষক জানান, আমাদের মনে হয় কলেজটি অভিভাবক শুন্য হয়ে গেছে। নেই কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষার মান যথেষ্ট ভালো কিন্তু এইসএসসি ছাড়া আর কোন বিভাগে বেতন ভাতা পাননা কলেজটির শিক্ষকরা। জরাজীর্ণ অবস্থা কে দেখবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে অনেক শিক্ষকরা দাবী করে বলেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বর্তমান শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি যদি আমাদের কলেজে একটি আইসিটি ভবন বরাদ্ধ দিতেন তাহলে শিক্ষার মানসহ সার্বিক উন্নয়ন হতো কলেজটিতে।
কলেজটির সভাপতি শামছুর রহমান জানান, শিক্ষার মান উন্নয়নে আমি সার্বিক শিক্ষকদের সাথে সার্বিক সহযোগীতা করে যাচ্ছি। অবকাঠামো উন্নয়নে মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট কথা বলেছি তিনি একটি ব্যবস্থা করবেন বলে আম্বস্থ করেছেন। হোস্টেলের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, মাওলানা সাহেব আগে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুদান এনে মেধাবী এবং গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের থাকা খাওয়া ফ্রি ব্যবস্থা করতেন কিন্তু বর্তমানে এটা করা সম্ভব হচ্ছেনা।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান জানান, অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ফ্যাসালিটিস বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছি কিন্তু অদ্যবধি কোন ফলাফল পাইনি।
খবর ৭১/ ই: