উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■ (৮-ফেব্রুয়ারি, ২৭৪): সরকারি হিসাবে নড়াইল জেলায় ইটভাটার সংখ্যা ৬০। যদিও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইটভাটার প্রকৃত সংখ্যা ৭৪টি। এর মধ্যে ৬০টি ভাটাতে রয়েছে ব্যারেল চিমনি, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রতি মৌসুমে অন্তত সাড়ে ৩০০ একর ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি গিলছে এসব ইটভাটা। নড়াইলে ৭৪ ইটভাটায় পুড়ছে গাছ গিলছে উর্বর মাটি নড়াইলে ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে ইটভাটা। অর্ধশতাধিক ভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে গাছ। ইট তৈরিতে ব্যবহূত হচ্ছে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি। একদিকে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে উর্বরাশক্তি হারিয়ে ফেলছে শত শত হেক্টর জমি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি ইটভাটা গড়ে তুলতে কমপক্ষে পাঁচ একর জমির প্রয়োজন হয়। কোনো কোনো ইটভাটা ৩০-৩৫ একর জমিজুড়ে। এক যুগ আগে নড়াইল জেলায় ১৮-২০টি ইটভাটা ছিল। এখন প্রায় চার গুণ হয়েছে। কৃষকদের দাবি, এসব ইটভাটা নির্মাণে অন্তত ৪০০ একর ফসলি জমি ব্যবহার করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটার ব্যবস্থাপক জানান, মধ্যম আকারের একটি ভাটায় বছরে ৪০-৫০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। আর প্রতি আট হাজার ইটের জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় এক হাজার ঘনফুট মাটি। এ মাটির জোগান আসে কৃষিজমি থেকে। সেই হিসাবে প্রতিটি ভাটায় বছরে গড়ে সাত একর জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহূত হয়। অর্থাৎ ৭৪টি ভাটায় অন্তত সাড়ে ৩০০ একর জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি ব্যবহূত হচ্ছে। এতে করে উর্বরা শক্তি হারিয়ে ফেলছে জমিগুলো। শুধু তা-ই নয়, প্রতিদিন ইট পোড়ানোর জন্য একটি ভাটায় গড়ে ৩৫-৪০ মণ কাঠ পোড়াতে হয়। সে হিসাবে ৭৪টি ভাটায় দৈনিক ২ হাজার ৫শ মণ কাঠ পোড়ে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক কাঠ ব্যবসায়ী জানান, তারা বিভিন্ন গ্রাম থেকে গাছ কিনে ভাটায় পৌঁছে দেন। আম, জাম, রেইনট্রি, কদম, জামরুল, কাঁঠাল, খেজুর, নারকেলসহ তিন শতাধিক ফলদ ও বনজ গাছ জ্বালানি হিসেবে প্রতিদিন ব্যবহূত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটার মালিক জানান, বছরে পাঁচ মাস ইট পোড়ানোর মৌসুম থাকে। এ সময় প্রতিদিনই ভাটাগুলোতে একই পরিমাণ জ্বালানির চাহিদা থাকে। সে হিসাবে পাঁচ মাসে ৫০ হাজারেরও বেশি গাছ কাটতে হয়। আইন অনুযায়ী ইটভাটায় কয়লা না পুড়িয়ে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে কেন?— এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ভাটা মালিকরা। তাদের দাবি, কয়লার দাম কমিয়ে সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ কয়লা আমদানির ব্যবস্থা করলে তারা আর কাঠ পোড়াবেন না। অগ্রিম টাকা দিলেও সময়মতো কয়লা পান না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। এদিকে ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে আশপাশের ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। লোহাগড়ার রামপুরা এলাকার কৃষক জহির কাজী জানান, তার ক্ষেতের পাশে ইটভাটা হওয়ায় আগের তুলনায় ফলন কমে গেছে। তার আশঙ্কা, ভাটা থাকলে কয়েক বছর পর কোনো ফসলই পাবেন না। সিভিল সার্জন আসাদুজ্জামান মুন্সি দিপু, আমাদের জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন প্রকার রোগ হতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। মানুষের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় জনবসতি থেকে সব ইটভাটা দ্রুত সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। ইটভাটার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজমির কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক চিন্ময় রায় বলেন, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কাটা হলে উর্বরতা নষ্ট হয়। ৪-৫ বছর সেই জমির উৎপাদন কম থাকে। ফসলি জমির আশপাশে ইটভাটা থাকলেও উৎপাদন অনেক কমে যেতে পারে। এসব বিষয় এরই মধ্যে জেলা প্রশাসককে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।ভাটায় বেআইনিভাবে কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, কিছু ইটভাটা মালিক কাঠ পোড়াচ্ছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব ভাটায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা ও জরিমানা করছি।
খবর ৭১/ইঃ