গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর, চন্দ্রদিঘলিয়া, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর, গোপালপুর যে দিকেই চোখ যাবে সে দিকেই শুধু হলুদ আর হলুদ। যেন মাঠ জুড়ে বিছানো কোন নারীর হলুদ শাড়ির আঁচল। ফুলে ফুলে ভরা সরিষার খেতের এমন দৃশ্য এখন মন ভরিয়ে দিচ্ছে কৃষকদের। দিগন্ত জোড়া মাঠে সরিষার আবাদ হয়েছে চোখে পড়ার মতো। সরিষা ফুলের মৌ-মৌ গন্ধ চারদিকে। চলতি রবি মৌসুমে গোপালগঞ্জে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই খুশির ঝিলিক দেখা দিয়েছে গোপালগঞ্জের চাষিদের মুখে।
জানুয়ারিতে সরিষা আবাদে কয়েক দিনের শৈত্য প্রবাহের কারণে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লেও বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে চলে আসায় সরিষার ভাল ফলন হয়েছে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই কৃষকের ঘরে উঠবে সরিষা। আমন ধান কাটার পর কয়েক মাসের জন্য পরিত্যক্ত থাকা এ সব জমিতে অতিরিক্ত ফসল হিসাবে বারি-১৪, ১৫, ও ১৬ এবং দেশি ও সাদা জাতের সরিষা আবাদ করেছেন কৃষকেরা।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় তিন হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়। আবাদ করা হয়েছে তিন হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। আর শস্য উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার তিনশ মেট্রিক টন। তবে প্রথমে শৈত্য প্রবাহের কারণে সরিষা উৎপাদনে আশঙ্কা দেখা দিলেও বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে আসায় লক্ষ্য মাত্রা পূরণ সম্ভব হবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
টুঙ্গিপাড়ার সিঙ্গিপাড়া গ্রামের কৃষক রহমত আলী জানান, এ বছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। সামান্য পরিচর্যায়ই ভাল ফুল ও ফলনও হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে ফসল ঘরে উঠাবেন তিনি। তবে ন্যায্য দাম না পেলে লোকসান দিতে হবে বলে মনে করছেন তিনি।
গোপালগঞ্জ সদরের গোপীনাথপুর গ্রামের কৃষক নুরুজ্জামান শেখ জানান, এ বছর সরিষার আবাদ করার পরপরই দেখা দেয় শৈত প্রবাহ। ফলে অনেক ফুল ঝরে যায়। একই উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের কাওসার মোল্যা জানান, তিনি ১১ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষ করায় ফলনও খুব ভাল হয়েছে। এখন বাজারের দাম নিয়ে ভাবছেন।
কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা গ্রামের কৃষক রহিম শেখ বলেন, আমি এ বছর ৪ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। ফলন ভাল হওয়ার যে শস্য পাব তা ভাঙ্গিয়ে আমার পরিবারের সারা বছরের তেলের যোগান হয়ে যাবে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী জানান, এ বছর গোপালগঞ্জে ব্যাপক সরিষার আবাদ করা হয়েছে। আবাহওয়া ভাল থাকায় ফুলও ভাল হয়েছে। এ সব জমিতে মৌবাক্স স্থাপন করায় পরাগায়নের ফলে ফলনও বেড়েছে।
খবর ৭১/ইঃ