নড়াইলে তিন বছরে ৭৯% কমেছে গমের আবাদ

0
1024

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■ (আজ শনিবার, ০৩লা ফেব্রুয়ারি, ২৭৪):

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২০১৫-১৬ মৌসুমে গমের আবাদ হয়েছিল ৬ হাজার ৩০২ হেক্টর, ২০১৬-১৭ মৌসুমে ৪ হাজার ১২৪ হেক্টর। চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ১২৪ হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে। নড়াইলে একসময় প্রচুর পরিমাণে গম উৎপাদন হতো। কিন্তু ইদানীং ফসলটির আবাদ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। গত তিন বছরে জেলায় গমের আবাদ কমেছে ৭৯ শতাংশ। উৎপাদন খরচের তুলনায় গমের দাম না পাওয়া, ধানের দাম বেড়ে যাওয়া ও ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে গমের আবাদ ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। একাধিক কৃষক জানান, দিন দিন গমের ফলন কমে যাচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন রোগের উপদ্রবও বেড়েছে। এক প্রকার রোগ হয়, যেটায় আক্রান্ত হলে জমির ফসল একদম নষ্ট হয়ে যায়, কোনো প্রকার কীটনাশক দিয়েও সেই রোগ দমন করা যায় না। সদরের হবখালী এলাকার কৃষক আজমল হোসেন জানান, এক মণ গম উৎপাদন করতে ৬০০-৭০০ টাকা খরচ হয়। আর মৌসুমে বাজারে প্রতি মণ গম বিক্রি হয় মাত্র ৬০০-৬৫০ টাকা। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আলেক মিয়া বলেন, বাজারে গমের চেয়ে ধানের দাম বেশি। সে কারণে তার মতো অনেক কৃষক গমের আবাদ ছেড়ে দিয়েছেন। গণ্ডব গ্রামের কৃষক হাসমত শেখ জানান, বর্তমানে বাজারে এক কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকা, এক কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫ টাকায়। কৃষকদের পোষাবে কী করে! উল্লেখ্য, ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ায় ২০১৬ সাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাত জেলা— মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, বরিশাল ও ভোলার কৃষকদের গম আবাদে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পরবর্তীতে পাবনা অঞ্চলও এ সতর্কতার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কুমড়ি গ্রামের গমচাষী রাকিব মোল্যা জানান, তিনি প্রতি বছর গম চাষ করেন। গত বছর ১ একর ১২ শতক জমিতে চাষ করেছিলেন। ফলনও ভালো হয়েছিল কিন্তু গমের দাম কম থাকায় উৎপাদন খরচও ওঠেনি। সে কারণে তিনি চলতি বছর মাত্র ৩০ শতক জমিতে গম চাষ করেছেন। একই কারণে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে গম চাষ করলেও এখন বোরো আবাদে ঝুঁকেছেন লোহাগড়া উপজেলার চাচই গ্রামের কৃষক আরিফ কাজি।এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নড়াইলের উপপরিচালক চিন্ময়, রায় আমাদের জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান,৩০ নভেম্বরের মধ্যে গমের বীজ বপনের সঠিক সময়। চলতি মৌসুমে নভেম্বরে জেলায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার কারণে সময় মতো চাষীরা তাদের জমিতে এ বছর গমের বীজ বপন করতে পারেননি। সেজন্যই চলতি বছরে গমের আবাদ অনেক কম হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, গমের চেয়ে ধানের দাম বাজারে বেশি থাকায় কৃষকরা গম আবাদে নিরুৎসাহিত হয়ে ধান আবাদে ঝুঁকছেন। তবে নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের মাঝে গম আবাদের প্রতি আগ্রহ তৈরির জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here