নড়াইলে খেজুর গুড় উৎপাদন উৎপাদন কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ

0
874

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
নড়াইল জেলায় খেজুর গুড়ের উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমছে। গাছ ও গাছির সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় তিন বছরের মধ্যে গুড় উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশে নেমেছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে নড়াইল থেকে খেজুর রসের ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নড়াইলে ১৫ বছর আগেও অসংখ্য খেজুর গাছ ছিল। তখন তিনটি উপজেলায় প্রায় তিন হাজার টন গুড় উৎপাদন হতো। কিন্তু এক দশক ধরেই গুড় উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জেলায় ৯১২ টন গুড় উৎপাদন হলেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৩৭০ টনে নেমে গেছে। চলতি বছর গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ৩০০ টন। কয়েকটি এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগের তুলনায় খেজুর গাছের সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে গাছির সংখ্যাও। খেজুর গাছ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে মাইজপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী বাদশা আলমগীর বলেন, অন্য কাঠের তুলনায় সস্তা হওয়ায় কাঠ ব্যবসায়ী ও ইটভাটা মালিকদের নজর এখন খেজুর গাছের দিকে। বিষয়টি স্বীকার করে একাধিক ভাটামালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সময় ও চাহিদামতো কয়লা না পেয়ে তারা জ্বালানি হিসেবে বিভিন্ন প্রকার কাঠ ব্যবহার করেন। তবে কয়লার তুলনায় দাম অনেক কম হওয়ায় ব্যাপক হারে খেজুর গাছ নিধনের কথাও স্বীকার করেন তারা। লোহাগড়া উপজেলার আমাদা গ্রামের গাছি জামাল শেখ (৫৯) জানান, ১৭ বছর ধরে রস সংগ্রহ করে আসছেন তিনি। এ বছর ৮০টি গাছে হাঁড়ি লাগিয়েছেন। অথচ পাঁচ বছর আগেও প্রতি মৌসুমে ২০০টির বেশি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন। দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে। তাছাড়া খাল-বিলে পানি কম থাকায় রসও আগের চেয়ে কম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান এ অভিজ্ঞ গাছি। তিনি বলেন, গাছ কমে যাওয়া ও একই সঙ্গে গাছপ্রতি রস উৎপাদনের হার কমে যাওয়ায় অনেক গাছিই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। গাছির অভাবে এখন গ্রামের সব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। খেজুর রসের বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে সদর উপজেলার চারিখাদা গ্রামের হালিম মোল্যা (৪২) বলেন, অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি থেকে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা যায়। আর ভালো দামে রস বিক্রি হচ্ছে। উড়ানী গ্রামের ব্যবসায়ী রাজ্জাক মোল্যা (৪৪) জানান, খেজুর রস ও ঝুনা নারকেল একসঙ্গে জ্বালিয়ে ‘নারকেল পাটালি’ তৈরি করা হয়। এ নারকেল পাটালি স্বাদে অতুলনীয়। প্রতি কেজির দাম ২৩০-২৮০ টাকা। প্রতি কেজি পাটালি গুড়ের মূল্য রাখা হয় ২০০-২৫০ টাকা। আর এক ঠিলা (ভাঁড়) রস বিক্রি করা হয় ১২০-১৩০ টাকা দরে। খুব কম সময়ের মধ্যে খেজুর গাছের সংখ্যা ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়া বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), নড়াইল জেলা শাখার বলেন, গত ১৫ বছরে ইটভাটায় ব্যাপক হারে খেজুর গাছের ব্যবহার হয়েছে। এটি বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ দরকার। তিনি আশঙ্কা করে বলেন, এভাবে গাছের সংখ্যা কমতে থাকলে একসময় খেজুর রস ও গুড় অতীত হয়ে যাবে! কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপপরিচালক চিন্ময় রায় আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, এ বছর ৩০০ টন গুড় উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন সড়কসহ জমিতে খেজুর গাছ লাগানোর জন্য কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে জেলায় কতটি খেজুর গাছ রয়েছে, সে পরিসংখ্যান নেই কৃষি বিভাগের।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here