২০১৭ সালে দুর্ঘটনায় ১৭৯ নির্মাণশ্রমিক নিহত, আহত ৪২ জন

0
399

খবর ৭১: নির্মাণশিল্পে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ২০১৭ সালে ১৭৯ জন শ্রমিক নিহত ও ৪২ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।

আজ বুধবার ওশি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত বার্ষিক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ওশির নিজস্ব তথ্য সংগ্রহকারী এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, শ্রমিক হতাহতের দিক থেকে নির্মাণশিল্পের অবস্থান দ্বিতীয়। ২০১৬ সালেও দেশের নির্মাণশিল্পে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক নিহত হন। সে বছর নিহত হন ১৪৭ জন শ্রমিক। অর্থাৎ ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে শ্রমিক নিহতের হার বেড়েছে।

ওশি নির্বাহী পরিচালক এ আর চৌধুরী রিপন বলেন, গত ১০ বছরে ঝরে গেছে এক হাজার ৫০৯ নির্মাণশ্রমিকের প্রাণ। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে ১৫০ নির্মাণশ্রমিক মারা গেছেন।

তিনি বলেন, শ্রমিক হতাহতের প্রধান দু’টি কারণ হচ্ছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া এবং উপর থেকে পড়ে যাওয়া। এছাড়া নির্মাণসামগ্রীর আঘাত, গ্যাস বা ধোঁয়ায় দমবন্ধ হওয়া এবং আগুনে পুড়ে অনেকে হতাহত হয়েছেন।

নির্মাণশ্রমিকরা পেশাগত নানা স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন শ্বাসকষ্ট, কানে কম শোনাসহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে ভোগেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ আর চৌধুরী রিপন বলেন, ২০১৭ সালে নিহত ১৭৯ জনের মধ্যে ১৭৫ জনই ছিলেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নির্মাণশ্রমিক। ফলে এই বিপুলসংখ্যক শ্রমিক শ্রম আইনের আওতায় না থাকায় তাদের পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পাবে না। তাছাড়া জরিপ অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ১০৩ জন দিনমজুর মারা গেছেন যাদের অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত ছিলেন। এ সংখ্যা যোগ করলে নির্মাণশিল্পে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়বে।

ওশি নির্বাহী পরিচালক বলেন, হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হচ্ছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপকরণ ব্যবহার না করা। অথচ হেলমেট, হাত মোজা, সুরক্ষা চশমা, সেফটি বেল্ট ব্যবহার করলে অনেক দুর্ঘটনা কমানো যেত। তাছাড়া নির্মাণাধীন স্থাপনা বা ভবনে প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা রাখলে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা থেকে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে স্থাপনা নির্মাণকালে সেইফটি সংস্কৃতি বাস্তবায়নে আমরা অনেক পিছিয়ে।

তিনি বলেন, দেশের মোট শ্রমশক্তির চার দশমিক চার শতাংশ জুড়ে রয়েছে নির্মাণ খাতের শ্রমিক। কিন্তু হতাহতের পরিমাণের দিক থেকে নির্মাণশ্রমিকরা হচ্ছেন ১৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ। ২০১৭ সালে দেশে বিভিন্ন খাতে মোট এক হাজার ২৪২ শ্রমিক মারা যান।

ওশির পক্ষ থেকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে যৌথ শ্রম পরিদর্শন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, শ্রম আইনে হতাহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের বিধান পর্যালোচনা করে এর পরিমাণ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়। এছাড়া হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, মালিকপক্ষের উদ্যোগে শ্রমিকদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দেয়া, সরকারের উদ্যোগে কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে নির্মাণাধীন স্থাপনায় নিয়মিত শ্রম পরির্দশন এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here