উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলের প্রতিটি মাঠ জুড়ে এখন সরিষার হলুদ ফুলের চাঁদরে ঢেকে গেছে দিগন্ত বিস্তৃত প্রকৃতি। প্রান্তর জুড়ে উঁকি দিচ্ছে শীতের শিশির ভেজা সরিষা ফুলের দোল খাওয়া গাছগুলো। সরিষার সবুজ গাছের হলুদ ফুল শীতের সোনাঝরা রোদে ঝিকিমিকি করছে। এ এক অপরুপ সৌন্দর্য। যেন প্রকৃতি কন্যা সেজেছে “গায়ে হলুদ বরণ সাজে”। চারপাশের মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ। উপজেলার প্রতিটি মাঠে এখন শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁ-ধালো বণীল সমরাহ। মৌমাছির গুনগুন শব্দে ভরে যায় প্রাণ। নড়াইলে এবার সরিষার আবাদ বেশ ভালো হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও যথাযথ পরিচর্যার কারণে প্রতিটি ক্ষেতই এখন সরিষা ফুলে পরিপূর্ণ। এ অবস্থায় কোনো দুর্যোগ না হলে ভালো ফলন ও মুনাফার আশা করছেন কৃষকর নড়াইল সদরের হবখালী গ্রামের কৃষক আসলাম সরদার জানান, প্রতি বছরই তিনি সরিষার আবাদ করেন। চলতি বছর আবাদ করেছেন প্রায় দেড় একর জমিতে। এরই মধ্যে তার সরিষা ক্ষেত ফুলে ভরে উঠেছে। কিছুদিন পরই দানা আসবে। সবকিছু ঠিক থাকলে গতবার থেকে এ বছর ফলন ও লাভ উভয়ই ভালো হবে বলে আশা করছেন তিনি। তুলারামপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক শেখ হাফিজুর রহমান আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, তিনি সরিষার আবাদ করছেন প্রায় আট বছর ধরে। এ বছর তিনি ৩২ শতক জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। এ অঞ্চলে স্থানীয়ভাবেও সরিষার বেশ চাহিদা রয়েছে। তিনিও এ বছর ভালো মুনাফার আশা করছেন। একই কথা জানান আমাদা গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ মণ্ডল। হলুদবরন ফুলে পরিপূর্ণ ক্ষেত দেখতে অনেকেই এখানে বেড়াতে আসছেন বলে জানান এ কৃষক। সরিষা ক্ষেত দেখতে আসা শারমীন নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী জানান, হলুদে পূর্ণ সরিষা ক্ষেত সত্যিই অসাধারণ। তাছাড়া সরিষার ফুলের ঘ্রাণও খুব ভালো লাগে। তাই প্রতি বছরই তিনি সরিষা ক্ষেতে ঘুরতে আসে আমাদা আদর্শ কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অচিন্ত্য লস্কর বলেন, সরিষা ক্ষেত থেকে প্রচুর পরিমাণ মধু সংগ্রহ করা সম্ভব। প্রায় দুই মাস সরিষার ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। সরিষার মধুর বিশেষ চাহিদা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নড়াইলে ৬ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নড়াইলের উপপরিচালক বলেন, নড়াইলের মাটি সরিষা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এখানকার কৃষক বিভিন্ন প্রকার সরিষা আবাদ করলেও বারি-৯, ১১, ১৪ ও ১৫ আবাদ করেছেন বেশি। এটি বেশ লাভজনক একটি ফসল। তাছাড়া সরিষার পাতা ও ফুল মাটিতে পচে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতেও সাহায়তা করে।
খবর ৭১/ ই: