আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট :লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রায় পাঁচ শতাধিক মেশিনে ভাঙ্গা হচ্ছে পাথর। এসব মেশিনের সাথে জড়িত শ্রমিকরা জানেন না সিলিকোসিস রোগে সর্ম্পকে। ফলে গত ৯বছরে সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ৫৫ জন শ্রমিকের মৃত্যু হলেও শতাধিক শ্রমিক এখনো এরোগে আক্রান্ত রয়েছে। থামেনি সেই মৃত্যুর আওয়াজ। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে গত বছরও মারা গিয়েছেন রাজু মিয়া ও হামিদুল হক নামের দুই শ্রমিক।
জানা যায়, জেলার পাটগ্রাম উপজেলার জিরো পয়েন্টে অবস্থিত বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথর ভাঙা মেশিনের শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন শ্রমিকরা। স্থলবন্দর জুড়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক মেশিনে চলছে পাথর ভাঙার কাজ। আর পাথর ভাঙার গুঁড়া নাক-মুখ দিয়ে শ্রমিকদের শরীরে প্রবেশ করছে। তবে এ কাজ করার সময় মাস্ক পরার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে অনেক শ্রমিকের ফুসফুস সিলিকোসিসে আক্রান্ত হচ্ছে।
২০১২ সালের আগস্ট মাসে পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রথম এরোগ ধরা পড়ে। ওই বছরেই এ বিষয়ে একটি সেমিনার করেছিল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস্ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। তাদের তথ্য মতে, এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল শতাধিক। তারমধ্যে অনেকে শ্রমিক মারা গেছে। ২০১৬ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরও ৩০ জন সিলিকোসিস রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর পাথর ভাঙা শ্রমিক সুরক্ষা কমিটির সভাপতি মমিনুর রহমান জানান, রাজু ও হামিদুল দীর্ঘদিন থেকে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা এ রোগের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি। তারা আরও জানান, তাদের অধীনে রাজুসহ ২০ শ্রমিক পাথর ক্রাসিং (ভাঙা) কারখানায় ছয় বছর ধরে কাজ করছেন। তারা সবাই এই রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে ১৬ জন শ্রমিক মারা গেছেন। গত বছর রাজুসহ মারা যাওয়ায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭ জনে।
বুড়িমারীর শ্রমিক সর্দার মতিউল ইসলাম জানান, তার অধীনে ১৬ শ্রমিক পাথর ভাঙার কাজ করেন। তারাও সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে ফতে আলী, নুরুজ্জামান, তবিবর রহমান, মজিবর, আব্দুর মালেক, আব্দুর রশিদ, নুর ইসলাম, ওসমান গনি ও হামিদুলসহ ১১ জন শ্রমিক মারা গেছেন। তিনিসহ আরও পাঁচজন এ রোগে ভুগছেন। এভাবে গত ৯ বছরে বুড়িমারী স্থলবন্দরে ৫৫ জন শ্রমিক সিলিকোসিস রোগে মারা গেছেন বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত করেছেন।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী বলেন, শ্রমিকদের সিলিকোসিস রোগের হাত থেকে বাঁচাতে নানা ধরনের ক্যাম্পেইনসহ প্রশাসনেরও সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। তবে পাথর গুঁড়া করার আগে তা না ভেজানো ও মাস্ক না পরে কাজ করায় শ্রমিকরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে সিলিকোসিস রোগে একবার কেউ আক্রান্ত হলে তাকে সুস্থ করে তোলা প্রায় অসম্ভব। ফলে ওই রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে সচেতনতার বিকল্প নেই।
এ ব্যাপারে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর কুতুবুল জানান, বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথর ক্রাসিং মেশিনগুলোয় শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ তৈরিতে শ্রম মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এক্ষেত্রে পাথর গুঁড়া করা মেশিনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সিলোকোসিস রোগে আক্রান্ত শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
খবর৭১/এস: