খবর ৭১: কক্সবাজারের উখিয়ায় বন্যহাতির আক্রমণে ইয়াকুব আলী নামে এক ব্যক্তি নিহত এবং আহত হয়েছেন আরো পাঁচজন।
শুক্রবার ভোরে মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাঁচটি বসতঘরও বিধ্বস্ত হয়েছে।
গত ১৩ অক্টোবর তারিখেও কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীর বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের চারজন নিহত হয়েছিলেন। এসময় আহত হয়েছিলেন একই পরিবারের বাবা ও ছেলে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য চুক্তি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বলে রোহিঙ্গা নেতাদের অনেকে বলছেন।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে, মায়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব, বসতভিটা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের ফেরত যাওয়ার পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। তারা ফেরত যেতে চান না।
এদিকে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাও মনে করছে, রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত না হলে তাদের মায়ানমারের ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না।
মায়ানমারে নির্যাতনের ফলে গত পাঁচ মাসে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে দু’দিন আগে দুই দেশ একটি চুক্তি সই করেছে।
যদিও এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য মাঠ পর্যায়ে এখনও দৃশ্যমান কোন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। কিন্তু কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের একজন নেতা মোহাম্মদ নূর বলছিলেন, চুক্তির খবরটি ছড়িয়ে পড়ায় তাদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
এর কারণ হিসেবে এই রোহিঙ্গা নেতা উল্লেখ করছেন, মায়ানমারের রাখাইনে এখনো তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।
এবার যখন গত আগস্টে মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়, সেই শুরুতেই সেখান থেকে পালিয়ে এসে স্বামী-সন্তানসহ পরিবারের ছয়জন সদস্য নিয়ে কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন বেগম সামসুন্নাহার।
তিনি বলছিলেন, এর আগেও মায়ানমারে নির্যাতনের ফলে দুই দফায় বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারপরও নিজের ভিটেমাটির কথা ভেবে ফেরত গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা থাকতে পারেননি। জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি এখন ফেরত যেতে চান না।
‘না, না আমি ফেরত যেতে চাই না। কারণ আমাদের উপর নির্যাতন করেছে। সেজন্য আমি আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এবারসহ তিনবার এই দেশে এসে আশ্রয় নিয়েছি। এখন আমাদের নাগরিকত্ব, থাকার জায়গা এবং নিরাপত্তাসহ অধিকারগুলো না পেলে আমরা কিভাবে যাব?’ বলছিলেন বেগম সামসুন্নাহার।
আরেকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী মো. হাশিম বলেন, এখন তাদের কিভাবে ফেরত পাঠানো হবে, সে ব্যাপারে তাদের কিছুই জানানো হচ্ছে না।
‘আমাদের ফেরত নিয়ে যেতে বলছে, তালিকা করাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কথা আমরা শুনছি। কিন্তু সেখানে আমাদের নিয়ে গিয়ে কিভাবে সেখানে রাখবে? কি মর্যাদা দেবে? এসব তো আমরা কিছুই জানি না। কিভাবে আমরা যাব?’
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। রোহিঙ্গাদের শরণার্থীদের যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করছে, তাদেরও উদ্বেগ রয়েছে।
জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বা ইউএনএইচসিআরে ঢাকায় একজন মুখপাত্র জোসেফ ত্রিপুরা বলছিলেন, ‘মায়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের অনেকেই ইউএনএইচসিআর এর কর্মকর্তাদের কাছে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে তারা মিয়ানমারে কিছু পরিবর্তন দেখতে চান। যেমন তাদের নাগরিকত্ব এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা তারা চান। তারা চান তাদের মৌলিক অধিকারগুলো।’
ইউএনএইচসিআর-এর এই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘মায়ানমারে ফিরে যাওয়াটা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে হয়, সেটা দেখতে হবে । সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তাদের ফিরে যাওয়াটা যেন টেকসই হয়। আবার যেন না শুনি যে, কয়েকমাস তারা আবার ফেরত আসছে।’
এদিকে, বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং থাকার ব্যবস্থা করাসহ অন্যান্য বিষয়ে মায়ানমার ব্যবস্থা নেবে, বাংলাদেশকে সেই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
খবর ৭১/ইঃ