খবর ৭১:সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা বলেছেন, সিপিডি ও বিএনপির বক্তব্যের মধ্যে পার্থক্য নেই। প্রতিষ্ঠানটি একটি রাজনৈতিক দলের তাবেদারি করছে।
বিএনপির নেতাদের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেন, ঢাকা সিটি নির্বাচন নিয়ে রায় দিলেন হাইকোর্ট। আসলে আইনের প্রতি তাদের (বিএনপির) কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই। যত সব নেগেটিভ কথা তাদের মুখে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ৯ বছর’- শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির আহ্বায়ক এইচ টি ইমাম। সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত, পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সচিব শামছুল আলম, আওয়ামী লীগের উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
সেমিনারে মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে সাবেক এমপি রওশন আরা সাথী বাজেট প্রণয়ন নিয়ে প্রশ্ন করেন। প্রশ্ন করেন ড. আওলাদসহ তরুণদের অনেকে। প্রশ্নফাঁস ও কৃষিজমি বেদখল বিষয়েও জানতে চান কয়েকজন। আওয়ামী লীগের প্রচার উপকমিটির আহ্বায়ক এইচ টি ইমাম এসব প্রশ্নের জবাব দেন।
ঢাকা উত্তর সিটি উপনির্বাচন স্থগিত বিষয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, রায় দিলেন হাইকোর্ট। আর সুযোগ নিলাম আমরা। এটা কোনো কথা হলো? এই কথার জবাব দেয়াই ঠিক না। আসলে আইনের প্রতি তাদের (বিএনপির) কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই।
তিনি বলেন, আমরা কি হাইকোর্টের সঙ্গে কথা বলেছি? যত সব নেগেটিভ কথা তাদের (বিএনপি) মুখে। তখন এস কে সিনহাকে নিয়েও খুব লাফালাফি করেছে বিএনপি।
তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, রংপুরের নির্বাচনে বিএনপি তৃতীয় হয়েছে, কুমিল্লায় তারা জয় পেয়েও বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আরও বেশি ভোট পেত। নারায়ণগঞ্জে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ করেছে বিএনপি।
তিনি বলেন, এখন ঢাকা উত্তর সিটি উপনির্বাচন স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। আসলে বিচার বিভাগের প্রতি বিএনপির কোনো শ্রদ্ধা-ভক্তিই নেই।
রিজভীর নিত্যদিনের ব্রিফিংয়ের বিষয়ে ইঙ্গিত করে তোফায়েল বলেন, বিএনপির অফিসে একজন থাকে প্রত্যেক দিনই কথা বলেন। কখনও হাসতে দেখি না। ডানেও তাকায় না- বামেও তাকায় না, বলেই যাচ্ছে। তারা বুঝে না প্রতিদিন কথা বললে সেটা মানুষ ভালোভাবে নেয় না। এখন আবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সমালোচনা করে সম্প্রতি দেয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, সিপিডির বক্তব্য আর বিএনপির বক্তব্যের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তিলি বলেন, আমাকে একজন বললেন- সিপিডির সঙ্গে বিএনপির তুলনা করাটা ঠিক হয়নি। পরে আমি তাকে বললাম দেখ, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়াটা দেয়ার কথা বিএনপির। কিন্তু সেই বক্তব্যটা দিল সিপিডি। বিএনপি আর সিপিডি তো একই। বিএনপি যে নেগেটিভ কথাগুলো বলে আমাদের বিরুদ্ধে সেই কথাগুলোই সিপিডি বলেছে।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বর্ণনা করে আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা বলেন, আজকের বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিশ্বে উন্নয়নের মডেল। বিশ্বের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করছেন। বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং অনুকরণীয় বলে বক্তব্য দিয়েছেন আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিশ্বের ৪৯টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে আমরা শীর্ষে।
তোফায়েল বলেন, বঙ্গবন্ধুর দুটি স্বপ্ন ছিল। একটি দেশকে স্বাধীন করা। আরেকটি বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত করা। তিনি যতটুকু পেরেছেন করে গেছেন। আর বাকি কাজটুকু করছেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা।
সিপিডি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করছে কেন? এ প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, সিপিডি এখন পলিটিক্যাল ইকোনমি করছে। তারা অন্য একটি রাজনৈতিক দলের তাবেদারি নিয়ে ব্যস্ত। আসলে যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা। ওদের মূল্য দিলে চলবে না। আমাদের নিজেদের মতো করে এগিয়ে যেতে হবে।
‘প্রশ্নফাঁস নিয়ে সরকারের অবস্থান কী’-এক তরুণের এমন প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, প্রশ্নফাঁস বর্তমানে বড় রকমের সমস্যা। কোনো দেশ এগিয়ে যাওয়ার সময় এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। এটা সরকারকে যন্ত্রণা দিয়ে থাকে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় কোচিং সেন্টারকে দায়ী করে এইচ টি ইমাম বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য কোচিং সেন্টার একটি সমস্যা। পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, চাষযোগ্য জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। এটি একটি বড় সমস্যা। তিনি বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যায় তখন এ রকম কিছু সমস্যা এসে পড়ে।
দেশে ধনী-গরিবের বৈষম্য অনেক কম দাবি করে এইচ টি ইমাম বলেন, তবে কয়েকজন ব্যক্তি ধনাঢ্য হলেও তারা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। দেশে ধনী-গরিবের বৈষম্য থাকবে না। এটা দূর হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যে পথনির্দেশ দিয়ে গেছেন আমরা সে পথেই এগিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্যে পৌঁছাতে আর বেশি সময় লাগবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি যে নৈরাজ্য করেছিল- তা আগামী নির্বাচনের আগে করতে দেয়া হবে না উল্লেখ করে এইচ টি ইমাম বলেন, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন। তখনও ছিলেন। কোথায় সেই অবরোধ? এসব অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বাংলাদেশে আর আসবে না।
নির্বাচনের আগে সব নেতাকর্মীকে সরকারের উন্নয়নচিত্র সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য তুলের ধরার আহ্বান জানান তিনি।
সেমিনারে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত বলেন, পদ্মা সেতু আমরা নিজেদের অর্থ দিয়ে তৈরি করছি। এটাই প্রমাণ করে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে কতটা এগিয়ে গেছে।
খবর ৭১/ এস: