খবর ৭১:ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়রের শূন্যপদে উপনির্বাচন ও সম্প্রসারিত অংশের কাউন্সিলর নির্বাচন আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ঘোষিত তফসিল স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে দুটি রিট হয়েছে।
বুধবার এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। পৃথক দুটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ তা আদেশের জন্য রেখেছেন।
আতাউর রহমানের করা রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান।সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আহসান হাবিব ভূঁইয়া।
জাহাঙ্গীরের করা রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোকাররামুস সাকলান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।
গত ৯ জানুয়ারি ওই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে পৃথক দুটি রিট করেন দুই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। একজন হলেন ভাটারা ইউপির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। অপরজন হলেন বেরাইদ ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম।
আইনজীবীরা জানান, গত ৯ জানুয়ারির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৮ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এখন যিনি প্রার্থী হবেন তিনি কিন্তু জানেন না তিনি ভোটার কিনা। তাছাড়া মনোনয়নপত্রে ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষর থাকতে হবে। ভোটার তালিকা প্রকাশ না হলে এটা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ৫ (৩) উপধারা অনুযায়ী ‘মেয়রের পদসহ কর্পোরেশনের শতকরা ৭৫ ভাগ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলে এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হইলে, কর্পোরেশন, এই আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, যথাযথভাবে গঠিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।’এ আইন মতে, উত্তর সিটি কর্পোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি মিলে কাউন্সিলর শতকরা ৭৫ ভাগ হয় না। কারণ নতুন ১৮টিতে তো নির্বাচনই হয়নি। সে হিসেবে মেয়র পদই তো গঠিত হচ্ছে না। তাছাড়া, সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডে যারা কাউন্সিলর হবেন তারা কত দিনের জন্য নির্বাচিত হবেন। তারা কি পাঁচ বছরের জন্য হবেন, না আড়াই বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। এসব প্রশ্ন রেখেই দুটি রিট করা হয়।
আবেদনে গত ৯ জানুয়ারি ঘোষণা করা তফসিল কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থা তফসিলের কার্যক্রম স্থগিত রাখারও আবেদন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রিটের শুনানি নিয়ে আদালত বুধবার তা আদেশের জন্য রেখেছেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীকে মামলার নথি সরবরাহ করার জন্য রিটকারী আইনজীবীকে বলেছেন আদালত।
চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন সেলিমও সাংবাদিকদের কাছে রিটের এসব যুক্তি তুলে ধরে বলেন, “গত ৯ জানুয়ারি যে তফসিলটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেটি কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।”
রিটের একটিতে প্রধান নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় সরকার সচিব ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়রকে বিবাদী করা হয়েছে।আরেকটিতে প্রধান নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশন সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব ও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন সংযোজিত ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট হয়। রিটে ডিএসসিসির ১৮টি ওয়ার্ডের নির্বাচন স্থগিত চাওয়া হয়। আক্তার হোসেনসহ ৮ জন স্থানীয় ভোটার বাদী হয়ে রিটটি করেন। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের বেঞ্চ রিটের শুনানি (স্ট্যান্ডওভার) মূলতবি করেন।
এর আগে ৯ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ডিএনসিসির মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং নতুন সংযোজিত ১৮টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। একই সঙ্গে ওই দিন ডিএসসিসির নতুন সংযোজিত ১৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনেরও তফসিল ঘোষণা করে। একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে দুই কর্পোরেশনের ৬টি করে ১২টি সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন। কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১৮ জানুয়ারি, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২৬ ফেব্রুয়ারি।
ইসি জানায়, ঢাকা উত্তরের নতুন মেয়র এবং ৩৬টি নতুন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মেয়াদ হবে সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ থাকা পর্যন্ত। ঢাকা উত্তরের ক্ষেত্রে এই মেয়াদ হবে ২০২০ সালের ১৩ মে পর্যন্ত। আর দক্ষিণে ২০২০ সালের ১৬ মে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পুরনো ৩৬টির সঙ্গে নতুন ১৮টি ওয়ার্ড যোগ হওয়ায় মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪টি। আর দক্ষিণ সিটির ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৭টি থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫টি।
খবর ৭১/ এস: