উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
শীতকালে ঠান্ডা হাওয়া ঢোকে ঘরে। গরমকালে উত্তাপে থাকা কষ্টকর। আর বর্ষায় চালের ফুটো দিয়ে পড়ে পানি। এ অবস্থা নড়াইলের ৭৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এর সব কটি বিদ্যালয়েই টিনের ছাউনির ছাপরায় চলে পড়াশোনা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নড়াইলে ৪৯৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৭৬টির ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এগুলোর মধ্যে সদর উপজেলায় ২২টি, লোহাগড়ায় ৩৭টি এবং কালিয়া উপজেলায় ১৭টি বিদ্যালয় রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার খলিশাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের কক্ষের ছাদ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। দরজা-জানালা ভাঙা। তাই ছাপরা তুলে চলে পাঠদান। বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী নিতিশা বিশ্বাস, জসিম উদ্দীন, সাব্বির আহম্মেদ ও কল্পনা রানী বলে, শীতে ঠান্ডা ও গ্রীষ্মে গরমে থাকা যায় না। বর্ষায় ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নূরজাহান মিতা বলেন, শ্রেণিকক্ষ জরাজীর্ণ হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের ঠিকভাবে পড়ানো যায় না। তাই বাধ্য হয়ে পাশে ছাপরা তুলে পাঠদান চলছে। প্রশ্নপত্র ও শিক্ষা উপকরণ চুরির ভয়ে বাড়িতে নিয়ে রাখতে হয়। জানতে চাইলে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘এ উপজেলার ২২টি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের মধ্যে পরিত্যক্ত এবং চরম ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় রয়েছে ১৪টি। শুনেছি ৭টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ এসেছে।’ নড়াইলের নড়াগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটির ছাদ ও বারান্দার পিলারের রড বেরিয়ে গেছে। পলেস্তারা খসে পড়ছে। তাই বাধ্য হয়ে বড়দিয়া-কালিয়া সড়কের পাশে ছাপরা তুলে পাঠদান চলছে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরাইয়া খানম ও ঝুমা খানম বলে, শীতের মধ্যে খোলা টিনের ছাপরার তলে বসে ক্লাস করতে কষ্ট হচ্ছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শাহানা ইসলাম বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও কাজে গতি নেই। রাস্তার পাশে গাড়ির হর্ণের শব্দ এবং খোলা স্থানে ক্লাস করানোর কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে চায় না। জানতে চাইলে কালিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিশির বিশ্বাস বলেন, এ উপজেলার ১৫৬টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭টি একেবারেই জরাজীর্ণ। বাধ্য হয়ে ছাপরা তুলে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। মধুমতী নদী থেকে একটু দূরে টিনের ছাপরা তুলে পাঠদান চলে লোহাগড়ার তেঁতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এখানকার প্রধান শিক্ষক এমএম শওকত আলী বলেন, ২০১৫ সালের আগস্টে নদীগর্ভে বিদ্যালয়ের ভবন বিলীন হয়। প্রায় দেড় বছর খোলা আকাশের নিচে পাঠদান চালানো হয়। এখন ছাপরা ঘরে নেওয়া হচ্ছে ক্লাস। জানতে চাইলে স্থানীয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, এ উপজেলায় ৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় রয়েছে। মধুমতী নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে দুটি বিদ্যালয়ের ভবন। আর যে কয়টা বিদ্যালয় আছে, তার কোনোটিতেই পাঠদান সম্ভব নয়। ছাপরা তুলে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর পরিবেশ নেই। এগুলোর সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে বেশ কয়েকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
খবর ৭১/ ই: