মুকুরুল ইসলম, মিন্টু চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি:যশোরের চৌগাছার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গত ১০ দিনের তীব্র শৈত্য প্রবাহে মানুষ সহ প্রানীকুল নাকাল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কর্মজীবি মানুষ কাজ না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম অসহায়। একদিকে হাড় কাঁপানো শীত, অন্যদিকে নেই কোন কাজ, সেই সাথে বাজারে প্রতিটি নিত্যপন্য সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এরফলে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষেরা। তীব্র এই শীতে অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে সমাজের বৃত্তবানদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন উপজেলার সচেতন মহল।
সূত্র জানায়, গত ১০ দিনের বেশি সময় ধরে সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছার উপর দিয়ে কখনও হালকা কখনও মাঝারী আকারের শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দিনের বেশির ভাগ সময় ধরে মানুষ সূর্যের আলো দেখতে পারছে না। বলা চলে সরাটা দিনই কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে আকাশ। দিনের বেলায় কিছু কিছু সময় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও ঠান্ডা কোন ক্রমেই কমছেনা। রাত কিংবা দিন ২৪ ঘন্টায় একই পরিস্থিতি বিরাজ করায় নাজেহাল মানুষ সহ প্রানীকূল। তাপমাত্রা সর্বনিন্মে নেমে আসায় উঠতি ফসলেরও চরম ক্ষতির আশংকা করছেন এ জনপদের কৃষকরা। ভর দুপুরেও চৌগাছা বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা দোকানের বাইরে এসে কাগজ, কাঠ খড়িতে আগুন ধরিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন। তবে সব থেকে বেশি কষ্টে দিন পার করছেন সমাজের খেটে খাওয়া মানুষেরা। দিন আনা দিন খাওয়া এ সব মানুষ দীর্ঘ দিন কোন কাজ না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যান্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তীব্র শীতের কারনে তারা দীর্ঘ ১০-১২ দিন কোন কাজে যেতে পারেনি। কাজ করতে না পেরে তারা অনেক কষ্টে এই দিনগুলি পার করছেন। প্রচন্ড ঠান্ডায় গরম কাপড়ের অভাবে খড় কুটায় আগুন দিয়ে একটু গরমের পরশ পেতে চেষ্টা করছেন ঠিকই কিন্তু সংসারের নিত্য খরচের কথা মনে উঠলে তারা সে সময় হয়ে যাচ্ছেন একবারেই নিরব। একদিকে হাড় কাপানো শীত, নেই কোন কাজ, অন্যদিকে বাজারের প্রতিটি নিত্যপন্যের দাম পাগলা ঘোড়ার মত ছুটছে। সব মিলিয়ে চরম অসহয় হয়ে পড়েছেন নিন্ম আয়ের মানুষ। গতকাল চৌগাছার প্রধান কাচাবাজারে যেয়ে দেখা গেছে, শীতের প্রতিটি সবজির যথেষ্ঠ যোগান আছে তারপরও দাম হাকা হচ্ছে আকাশ ছোঁয়া। বাজারে ১ কেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। অনরুপ ভাবে টমোটো ১ কেজি ৪০ টাকা, সীম ১ কেজি ৪০ টাকা, মেটে আলু ১ কেজি ৫০ টাকা, পেঁপে ১ কেজি ২০ টাকা, পিঁয়াজের ফুল ১ কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা, লাল শাক ১ আটি ১০ টাকা, পালন শাক ১ আটি ১০ টাকা, পাতা কপি প্রতিটি ২০ টাকা, ফুল কপি ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১ কেজি ৮০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, মিটকুমড়া ৪০ টাকা, পিয়াজ ৭০ টাকা, রশুন ৭৫ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, খিরে ৪০ টাকা, প্রতিটি লাউ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খাশির মাংস ৭০০ টাকা, গরুর মাংস ৪২০, দেশি মুরগী ৩২০ আর পোল্ট্রি মুরগীর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। চৌগাছার বাজারে মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা আর চিকোন চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে। অনুরুপ ভাবে সব ধরনের মাছ বলা চলে সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। ডাল, তেল, মশলা, চিনি, সাবান কোন কিছুতেই যেন হাত ছোঁয়ানোর কায়দা নেই। বাজার করতে আসা ভ্যান চালক আব্দুর রশিদ জানান, তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়েছি। তার সাথে বাজারের প্রতিটি মালামালের এই দামের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। বাজারে আগের মত লোকজন আসছে না ভাড়াও কমে গেছে বহুগুন। আয় কমে যাওয়ায় বেশ সমস্যা পড়েছি। দিন মজুর আছের আলী জানান, গত ১০ দিনে কোন কাজ হয়নি। শীতের কারনে ঘর থেকেই বের হতে পারেনি। তাই কাজ না থাকায় পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করছি। আয় নেই কিন্তু খাওয়া তো আর বসে নেই। ধারকর্য করে বাজারে এসেছি বাজার করার আশায় কিন্তু যে দাম তাতে কোন রকমে বাজার করে বাড়িতে ফিরতে হবে। কবে যাবে শীত আর কবে যাব কাজে সেই অপেক্ষায় দিন পার করছি। রড মিস্ত্রি আবুল কালাম জানান, তার সাথে অন্তত ৩০/৩৫ জন মানুষ নিয়মিত কাজ করে। হাঁড় কাপানো এই শীতে তারা অনেকেই কাজে আসতে পারছে না। আমার দলে এমনও লোক আছে যারা দিনের কাজ করে পারিশ্রমিক নিয়ে বাড়িতে ফিরলে সবার খাওয়া। কিন্তু গত কয়েক দিনে ওই সকল ব্যক্তিরা চরম অবস্থায় দিন পার করছেন। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে তীব্র এই শীত এখনও দু’একদিন অব্যহত থাকতে পারে। স্মরণকালের তীব্র এই শীতে অসহায় মানুষের তালিকা করে তাদের প্রতি সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দিতে সমাজের বৃত্তবানদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন উপজেলার সচেতন মহল।
খবর ৭১/ ই: