খবর ৭১:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহিত্যের অন্বেষণকে মানবিক মূল্যবোধের উন্নয়ন এবং যৌক্তিকতাবোধকে শাণিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে সাহিত্যচর্চায় নিয়োজিত থেকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সাহিত্য মানুষকে যুক্তিবাদী ও সংবেদনশীল করে তোলে। বহুমাত্রিক সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে। সভ্যতা বিকশিত হয়েছে মানুষের সৃজনশক্তিতে। আর এই সৃজনশীলতার বাহন হচ্ছে ভাষা। আর তাই সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশে সাহিত্যের ভূমিকা অপরিসীম।’ প্রধানমন্ত্রীবলেন, ‘আপনারা জানেন বিশ্বজুড়ে আজ এক অস্থিরতা বিরাজ করছে। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য গ্রাস করে নিতে চাচ্ছে সব শুভবোধকে। এই অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে লড়তে হলে আমাদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে হবে। আর এ জন্য সাহিত্যচর্চার কোনো বিকল্প নেই।’
রোববার বিকালে রাজধানীর ওসামানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন-১৪২৪’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
সাহিত্যচর্চা মানুষের মধ্যে শুভবোধের বিকাশ ঘটায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের অমিত সম্ভাবনার দ্বারকে উন্মোচিত করে। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে লড়তে শেখায়। যে সমাজের সাহিত্য যত ঋদ্ধ, সেই সমাজ তত বেশি সভ্য। আমাদের বাংলা সাহিত্যের ভিত্তিও অনেক সুদৃঢ়। আর সে কারণেই বাংলা ভাষা আজ বিশ্বের অন্যতম মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।
সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বর্ষীয়ান সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন, নিখিল ভারত বঙ্গসাহিত্য সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত ঘোষ, সহসভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের সহসভাপতি সত্যম রায় চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ভারত, জাপান এবং জার্মানি থেকে আগত প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা সম্মেলনের এই মূল প্রতিপাদ্যের উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত সব বাঙালির মনে রাখতে হবে যে, আমাদের শেকড় হচ্ছে বাংলা। এই বাংলা ভাষাকে ভিত্তি করেই আমাদের স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়।
তিনি বলেন, বাঙালিরা কারো কাছে কখনো মাথা নত করে না, মাথা নত করতে জানে না। কাজেই বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করেই আমাদের চলতে হবে। আমরা বাঙালি এটি ভুলে গেলে চলবে না। আজকে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাঙালির অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গির আদান-প্রদানের মাধ্যমে আমাদের জানার পরিধি আরও বিস্তৃত হবে। আমাদের সাহিত্য আরও ঋদ্ধ হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আয়োজন একদিকে নতুন সম্ভাবনাকে উন্মোচিত করবে, অন্যদিকে নিজেদের সামর্থ্যকে তুলে ধরবে।
তিনি বলেন, আমাদের এই ঋদ্ধ ভাষায় যারা সাহিত্যচর্চা করছেন, তাদের একত্র করার এই যুগোপযোগী উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি সাধুবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির সাহিত্য সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণের উদ্ধৃতি দেন।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি জনগণই সব সাহিত্য ও শিল্পের উৎস। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনো দিন কোনো মহৎ সাহিত্য বা উন্নত শিল্পকর্ম সৃষ্টি হতে পারে না। আমি সারা জীবন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সংগ্রাম করেছি, এখনো করছি। ভবিষ্যতে যা কিছু করব জনগণকে নিয়েই করব।
তিনি বলেন, ২১-এর রক্তরাঙা পথ বেয়েই বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলন এবং স্বাধীকারের চেতনা ধীরে ধীরে এক দুর্বার গতি লাভ করে। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ইউনেস্কো কতৃর্ক ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণায় তার সরকার এবং কানাডাপ্রবাসী সালাম, রফিকদের মহৎ অবদানের কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য কানাডাপ্রবাসী সালাম ও রফিকসহ কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করে। ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আজ সারা বিশ্বের সব নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
সরকারপ্রধান বলেন, আসলে মাতৃভাষা ছাড়া মানুষ কখনো নিজেকে গড়ে তুলতে পারে না। জাতির পিতা ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন।
তারই পদাংক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী নিজেও জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে আসছেন বলে উল্লেখ করেন।
খবর ৭১ /এস: