খবর ৭১: উন্নয়নের মেলা নয় দুর্নীতির মেলা চলছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘এটা উন্নয়নের মেলা নয়, এটা দুর্নীতির মেলা। কারণ প্রত্যেকটা উন্নয়নের পিছনে যে ব্যাপক দুর্নীতি, এই কথা সবাই জানে। আর উন্নয়নের নামে যে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে, তার কোন ফিলিস্তি প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার বক্তব্যে দেননি। কারণ বড় বড় প্রকল্প মানে হলো বড় বড় কমিশন। আর বড় বড় কমিশন মানে হলো বড় বড় ঘুষ।’
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট আয়োজিত ‘বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক প্রতিবাদী আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মওদুদ আহমদ বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশের প্রয়োজন, সে কথা গতকাল প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন নাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা প্রত্যাশা করি, সকল কিছুর উর্দ্ধে উঠে জনগণের যে ইচ্ছা তার প্রতিফলন ঘটাবেন। তিনি সকল মানুষের জন্য এমন পরিবেশন তৈরি করবেন যাতে সবাই তাকে বাহবা দিতে পারে। আমরা আজকে তাকে অভিনন্দন জানাতাম, যদি তিনি তাঁর ভাষণে একটি নিদলীয় ও একটি নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা দিতেন। কিন্তু তাঁর ভাষণ সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও দুঃখের কোন প্রতিফলন ঘটনাতে পারে নাই। দেশের যে প্রকৃত সমস্যাগুলো তা তিনি উল্লেখ করেন নাই।’
নির্বাচনকালীন একটি সরকার গঠন করা হবে প্রধানমন্ত্রী এই বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য কোন সরকার গঠন ও কোন ব্যবস্থা বর্তমান সংবিধানে নাই। সুতরাং এই কথা বলে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। মূলত দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে, এই কথাটাই প্রধানমন্ত্রী বলার চেষ্টা করেছেন।’
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘জনগণ প্রত্যাশা করেছিল। আগামী নির্বাচন কীভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায়, সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু একটা বলবেন। কিন্তু সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছুই বলেন নাই!’
কি করে নির্বাচন হবে-এমন প্রশ্ন রেখে মওদুদ বলেন, ‘একটি দল নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে গেছে। আর আমাদের (বিএনপি) গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। কোন সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশ্য দেওয়ার ভাষণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশের আসল চিত্র তুলে ধরেননি। সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে গিয়েছেন। তিনি তার সরকারের উন্নয়নের কথা বলেছেন এবং বিরোধী দলকে কীভাবে আঘাত করা যায়, সেভাবেই তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু দেশে যে গণতন্ত্র নাই, আইনের শাসন বিলপ্তির পথে, প্রধান বিচারপতির অপসারণের মধ্যে দিয়ে বিচার বিভাগের মৃত্যু ঘটনা হয়েছে, নিম্ন আদালত যে নির্বাহী বিভাগের অধীনে গেছে, বিচার বিভাগের পৃথকীকরণে মাসদার হোসেনের মামলার যে মৃত্যু ঘটেছে, সংসদ যে অকার্যকর, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যে একটি ভোটবিহীন নির্বাচন হয়েছে, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিবে কিনা বা সেনা মোতায়েন করা হবে কিনা, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গুম, খুন, নারী-শিশু নির্যাতন, সাগর-রুনির হত্যা বিচার, জনগণের টাকা লুষ্ঠন করা হচ্ছে, এসব বিষয়ে আমরা কিছু শুনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি এসব তার বক্তব্য বলেন নাই। সুতরাং তার ভাষণ একতরফা ভাষণ।’
এছাড়া শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার যে একটি অনির্বাচিত সরকার এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিন হয়নি। এই কথাটাও তিনি বলতে ভুলে গিয়েছেন-বলেন মওদুদ।
কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কখন যে কে গ্রেফতার হয় তার কোন হিসেব নেই। কিন্তু আমাদের (বিএনপি) কোন উপায় নাই, আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার, আইনের শাসন, বিচারবিভাগ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হবে।’ সুতরাং আমাদের ওপর যতই নির্যাতন ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হোক না কেনো, কোন কিছুই আমাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না- বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মওদুদ আহমদ।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মাদ রহমত উল্লাহ, ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তাফা ভুইয়া প্রমুখ।