উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ নড়াইলে আগের দিনের মত আর দেশীয় সংস্কৃতি বাদ্যযন্ত্রের তেমন চাহিদা নেই। যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে দেশীয় সংস্কৃতি বাদ্যযন্ত্র ঢাক,ঢোল, কর তাল,তবলা। তবে অনেক কষ্ট করে বাপ-দাদার পেশা হাল ধরে রেখেছে কালা দাস, ধলা দাস, অনপ দাস। সে জানায়, জন্মের পর থেকে বাবা কিরন দাস এর কাছ থেকে এই বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করতে শিখে তারা পরে আস্তে আস্তে এই বাদ্যযন্ত্র তৈরী করতে শিখিয়েছেন। এক সময় দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা অনেক গুনে বেশি ছিল। বর্তমানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে তাল দিতে না পেরে তাদের মুল ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে দ্বাড়িয়েছে। প্রথমে বাপ-দাদরাই এ পেশায় দেশীয় বাদ্যযন্ত্র ঢাক-ঢোল,করকা,খোল,তবলা,একতারা,খমর,দো-তারা,ঢোলোকসহ সাইড ড্রাম তৈরী ও মেরামতের কাজ শরু করেন। বাবার বয়স বাড়ার পর থেকে দির্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে, বাবা মারা গেছে এর পর পুরো দায়ীত্বটাই তাকে নিতে হয়েছে। কালা দাস, ধলা দাস, অনপ দাস,। বাজারের ছোট্র একটি রুম নিয়ে বাদ্যযন্ত্র তৈরী ও মেরামত করেন। বর্তমানে এ পেশায় কাজ করে সংসারের ভরণ-পোষণ কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তিনি আরো জানান, বছরে তিন মাস আশ্বিন,কার্ত্তিক,অগ্রাহয়ন মাস কাজে চাপ থাকেও পরের মাস গুলোতে তেমন কোন ব্যবসা হয় না। এই তিন মাসেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন স্থানে অষ্টপ্রহরসহ প্রতি বাড়ীতে ও মন্দিরে হরিনাম কীর্তন করে বেড়ায় এরাই মূলত দেশীয় সংস্কৃতি বাদ্যযন্ত্রের ক্রেতা । এ ছাড়াও নিজস্ব বাসা-বাড়ীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের লোকেরা কিছু কিছু বাদ্যযন্ত্র তৈরী করে ও মেরামত করে থাকেন। বর্তমানে প্রতিটি খোল নতুন করে তৈরী করে ক্রেতার কাছে বিক্রি করে ২ হাজার ৫ শত টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। তবলা বিক্রি করে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা সাইড্রাম তৈরীতে ৪হাজার টাকা, দো-তারা তৈরীতে ৪ হাজার টাকা,জিপাসি তৈরীতে ৮শত টাকা। গোপি যন্ত্র(খমক) ৬শত টাকা বিক্রয় করে থাকি। খোল,সাইড ড্রাম,দো-তারা তৈরীতে সময় লাগে চার থেকে পাঁচ দিন। অন্যন্যা বাদ্যযন্ত্র তৈরী সময় লাগে দুই থেকে তিন দিন। এসব বাদ্যযন্ত্র তৈরী করতে যে মালামাল লাগে তা বর্তমানে অনেক দামে কিনতে হয়। যার ফলে পুষিয়ে উঠা সম্ভব হয় না। জেলা উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতাদের দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরীতে বছরে এই তিন মাস কাজ করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা কোন রকমে আয় হয় । বছরের বাকি নয় মাস উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান,নীলা কীর্তন,বিয়ে বাড়ীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র বাদক (শিল্পী) হিসাবে কাজ করে জীবন-জীবীকা নির্বাহ করি। তৈরী বাদ্যযন্ত্র বিক্রেতা জানান, গীটার, প্যাড ড্রাম, কি-বোর্ড দিয়ে আগেকার গান গুলোর সঙ্গে তাল মিলেনা কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ও বিক্রয় করছি। সে কারনে অনেকটায় দেশিয় বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা কমে গেছে। এখনকার ছেলে,মেয়েরা দোকানে আসলেই প্রথম পছন্দ করে গীটার,কি-বোর্ড আধুনিক বাদ্যযন্ত্র। সেই কারনে আমাদের এই ধরনে বিক্রয় সামগ্রী বেশী রাখতে হয়। এ ব্যাপারে কালা, ধলা, অনপ জানান, এ পেশায় রয়েছি, বর্তমানে পশ্চিমা সাংস্কৃতির ছোয়া এবং তাদের গান গুলি দর্শক বেশী পছন্দ করে। সে কারনে দর্শকের মন যোগাতে পশ্চিমাদের এই গান গুলি আমাদেরকেও গাইতে হয়। বর্তমান গানগুলির সংঙ্গে তাল মেলাতে তেমন আর দেশিয় বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োজন হয় না, ফলে তা আর তৈরী ও ব্যবহারে তেমন কোন আগ্রহ দেখা যায় না। দেশিয় বাদ্যযন্ত্রকে লালন পালন করতে আমাদের মনমানষিকতার পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরী। তা না হলে একদিন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢাক-ঢোল, তবলা, একতারা,দো-তারা,বিলীন হয়ে যাবে। আমাদের দেশিয় সংস্কৃতিকে ধরণ করেতে হলে অবশ্যই দেশিয় বাদ্যযন্ত্রের প্রতি যত্নবান হতে হবে বলে মনে করে এখানকার অনেক প্রবীন গুনি শিল্পীরা।
খবর ৭১/ইঃ