খবর৭১: তাবলিগ জামাতের বৃহত্তম সম্মিলন বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব টঙ্গীর তুরাগ নদ তীরে আজ থেকে শুরু হচ্ছে। তিন দিনব্যাপী এ ইজতেমার প্রথম পর্ব শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ১৪ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে। চারদিন পর ১৯ জানুয়ারি শুরু হবে ইজতেমার দ্বিতীয়পর্ব এবং শেষ হবে ২১ জানুয়ারি। এদিকে তাবলিগ জামাতের এক পক্ষের বিরোধিতার মুখে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ না দিয়েই বাংলাদেশ ছাড়তে হচ্ছে দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভীকে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে দুই ঘণ্টা বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
ইজতেমায় মুসলিম জাতির সুখ, শান্তি, কল্যাণ, অগ্রগতি ও ঐক্য কামনা করে মোনাজাত করা হবে। এতে দেশ–বিদেশের প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ইজতেমা আয়োজক কমিটি। এদিকে ইজতেমা ময়দানে ইতোমধ্যে দেশী–বিদেশী মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের স্রোত এখন টঙ্গীমুখি। প্রয়োজনীয় মালপত্র সঙ্গে নিয়ে দলে দলে মুসল্লিরা ময়দানে এসে যার যার খিত্তা ও কামরায় অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। ইজতেমার মুরুব্বি মো: গিয়াস উদ্দিন জানান, গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে এবারের বিশ্ব ইজতেমার দুই ধাপে অংশ নেবেন দেশের ৩২ জেলার মুসল্লি। প্রথম ধাপে অংশ নিচ্ছেন বিদেশী মুসল্লিসহ দেশের ১৬ জেলার মুসল্লিরা। তিনি জানান, ইতিমধ্যে প্যান্ডেল, মঞ্চ, মুসল্লিদের পারাপারে তুরাগ নদের উপর ভাসমান সেতু, টয়লেট, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি পৃথক ৫টি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে বলে জানান। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস টিম, ৫০টি মেডিকেল টিমসহ সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয়েছে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে। প্রস্তুত থাকবে ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স। মুসল্লিদের নিরাপত্তায় পুলিশের সাত হাজার সদস্য ও র্যাবের ২৫০ থেকে ৩০০জন সদস্য মাঠে মোতায়েন থাকবে। এ বছর গতবারের চেয়ে প্রায় দেড় হাজার পুলিশ সদস্য ও ৫টি ওয়াচ টাওয়ার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪১টি সিসি ক্যামেরা ইজতেমা মাঠের চারপাশে স্থাপন করা হয়েছে।
প্রথম পর্বের ১৬ জেলা হচ্ছে: ঢাকার একাংশসহ নারায়ণগঞ্জ, শেরপুর, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, লক্ষীপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, নড়াইল, মাদারীপুর, ভোলা, মাগুরা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পঞ্চগড়, নেত্রকোনা, নরসিংদী ও বগুড়া। এ বছর ১৬০ একর এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে চটের প্যান্ডেল। বিদেশি মেহমানদের জন্য এবার তৈরি করা হয়েছে ৪ কামরা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক নিবাস। ইজতেমায় যাতায়াতের সুবির্ধার্থে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৭টি ভাসমান পল্টুন ব্রিজ তৈরি করেছে।
ফিরে যাচ্ছেন মাওলানা সাদ: তুরাগ তীরের ইজতেমায় দিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাজের মুরব্বি মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির যোগদান নিয়ে বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের বিবাদমান দুই পক্ষের সাথে বৃহস্পতিবার সমঝোতা বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘মাওলানা সাদ ইজতেমায় যাবেন না। সুবিধাজনক সময়ে তিনি বাংলাদেশ থেকে চলে যাবেন। দুপক্ষই এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে।’ গত বুধবার দুপুরে তাবলিগ জামাতের এক পক্ষের বিক্ষোভের মধ্যে ঢাকা পৌঁছানোর পর থেকে মাওলানা সাদ আছেন বাংলাদেশে তাবলিগের কার্যক্রমের মূলকেন্দ্র ঢাকার কাকরাইল মসজিদে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাদ যে কদিন বাংলাদেশে থাকবেন, কাকরাইল মসজিদেই থাকবেন বলে বৈঠকে ঠিক করা হয়েছে। বাংলাদেশ তাবলিগের ১১ সদস্যের শুরা কমিটির দুজন বাদে সবাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ আলোচনার পর মাওলানা সাদের বিষয়ে ‘সর্বসম্মতভাবে’ ওই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান মন্ত্রী।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, শুক্রবার বাদ জুমা মাওলানা সাদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি ফ্লাইটে দিল্লি ফিরে যাবেন।
খবর৭১/জি: