খবর৭১: সুনামগঞ্জে এক ফসলি বোরো ধান উৎপাদনসমৃদ্ধ হাওরগুলো রক্ষায় কাবিটার নতুন নীতিমালা অনুযায়ী গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধ নির্মাণের কাজ বাধ্যতামূলক শুরু করার কথা ছিল। আর শেষ করার কথা ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু কাজ শুরুর নির্ধারিত সময়ের ২৬ দিন পরও বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি।
প্রকল্প অনুমোদন, পিআইসি গঠন ও মাঠের কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিদের সহায়তা না পাওয়া এমন নানা কারণের কথা বলছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। অনেক উপজেলার হাওরে পানি না কমায় এখনো বাঁধ নির্মাণ শুরু করা হয়নি। ফলে লাখ লাখ কৃষক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছেন।
জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই, শাল্লা, ছাতক, দোয়ারাবাজারসহ ১১টি উপজেলার ছোট-বড় ১৫৪টি হাওরের বাঁধ রক্ষায় পিআইসি অনুমোদন হয়েছে ৮৬৫টি। এবার পিআইসি গঠনের দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বাধীন কমিটির। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী নদী, খাল পুনর্খননের জন্য স্কিম প্রস্তুত ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাবিটা নীতিমালা-২০১৭ অনুযায়ী কাজ হবে। সে অনুযায়ী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পিআইসি গঠনের নির্দেশনা ছিল।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ করার কথা থাকলেও গত শনিবার মাত্র নলুয়ার হাওরের বাঁধের কাজের উদ্বোধন করেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। আর কোথাও এখনো বাঁধ রক্ষার কাজ শুরুই হয়নি।
নির্ধারিত সময়ের এক মাস পর পিআইসি গঠন করে অনুমোদন হলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলার পিআইসি অনুমোদনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। পাউবো জানা যায়, হাওর রক্ষা বাঁধের কাজে গতি আনার জন্য দুটি বিভাগে বিভক্ত করা হয়। পাউবোর সুনামগঞ্জ (পরিচালনা ও রক্ষাণাবেক্ষণ) বিভাগ-১-এর অধীনে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪৮টি, বিশ্বম্ভরপুরে ৩৫টি, তাহিরপুরে ৬০টি, জামালগঞ্জে ৬৯টি ও ধর্মপাশায় ১৭৯টি পিআইসি গঠন করে ১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
বিভাগ-২-এর অধীনে দিরাইয়ে ১১৩টি, শাল্লায় ১৪১টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৬০টি, জগন্নাথপুরে ১০৮টি, ছাতকে ১১টি, দোয়ারা বাজারে ৪১টি পিআইসি গঠন করে ১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, হাওর রক্ষার বাঁধ ১ হাজার ৪৫০ কিলোমিটার নির্মাণের চাহিদা থাকলেও রাজস্ব খাতে ৩৬টি হাওরে কাজ হবে ৫৭৯ কিলোমিটার। ৯১ কোটি টাকার চাহিদা থাকলেও অনুমোদন হয়েছে ২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
গত বছর সুনামগঞ্জের হাওরের বাঁধ রক্ষায় ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ঠিকাদারদের জন্য বরাদ্দ ৪৮ কোটি ও পিআইসিদের ২০ কোটি টাকা। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে হয়েছিল পুকুর চুরি, যার জন্য অকাল বন্যায় বাঁধ ভেঙে সব হাওর পানিতে তলিয়ে যায়। এতে করে জেলার ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার সর্বমোট আবাদি জমির পরিমাণ ৩ লাখ ৭৯ হাজার ২১৬ হেক্টর। গত বছর ২ লাখ ১৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছিল। আর বাকি জমিতে অন্যান্য ফসল, যার মূল্য ১৫০ কোটি টাকার বেশি। চলতি বছর ২ লাখ ২২ হাজার ৫৫২ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তাহিরপুরের কৃষক খেলু মিয়া, রফিকুল ইসলাম, সাদেক আলীসহ বিভিন্ন উপজেলার হাওরবাসী জানান, এবারও সময় নষ্ট করে প্রকল্প প্রস্তুত, অনুমোদন ও পিআইসি গঠন আর নতুন নীতিমালা ঢোল পিটিয়ে বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এবারও বিপর্যের আশঙ্কা করছেন তারা।
তাহিরপুর উপজেলায় পিআইসি গঠন করা শেষ ও অনুমোদন হয়েছে বলে জানান নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্ণেন্দ্র দেব। তিনি বলেন, ‘সব কাজ সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমরা।’
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিভিশন-১) আবু বক্কর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব পিআইসি গঠন করার কথা ছিল। কিন্তু নানান কারণে দেরি হয়েছে। ৬ জানুয়ারি অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান নলুয়ার হাওরের বাঁধের কাজের উদ্বোধন করেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যাতে করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলার সব বাঁধের কাজ শেষ হয়ে যায়।’
খবর৭১/জি: