খবর৭১: দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি একাদশ সংসদ নির্বাচনেও ভোটে না গেলে দলটির জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত এমাজউদ্দিন আহমদ।
ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে নিজের এই ভাবনার কথা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাতে তাদের ক্ষতি হবে।’ অবশ্য এই ক্ষতি কী ধরনের হতে পারে, সেটি তিনি বিস্তারিত বলতে চাননি।
আবার বিএনপির দ্বিতীয় দফা ভোট বর্জন করলে আওয়ামী লীগের জন্যও সেটা সুখকর হবে না বলে মনে করেন এই বুদ্ধিজীবী। বলেন, সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলও জাতীয় ও আন্তর্জতিক পর্যায়ে সমালোচিত হবে। এজন্য সরকারকে একটি সংলাপে বসার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এমাজউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিকে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে আসছেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার কথাকে বেশ গুরুত্ব দেন। ২০১৫ সালে বিএনপির ডাকা অবরোধ অকার্যকর হয়ে যাওয়ার পর দলটিকে কর্মসূচি থেকে বের করে এনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়াতে তার ভূমিকা ছিল। আর তার কারণেই তখন সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন ডেকে কর্মসূচি চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হওয়ার বিএনপি রাজনৈতিক দিক থেকে অসম্মানের হাত থেকে রক্ষা পায়।
দশম সংসদ নির্বাচন যে দাবিতে বিএনপি বর্জন করেছিল, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এবারও মানা হবে না, সাফ জানিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর দুইবার সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ বিএনপি আবার সরকারকে চাপে ফেলতে পারবে কি না এ নিয়ে খোদ দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যেই সন্দেহ আছে।
এই পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতারা ২০১৪ সালের মতোই আবারও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। ফলে একাদশ সংসদ নির্বাচনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে কি না এ নিয়ে সংশয় কাটছে না।
এই পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালে আন্দোলন থেকে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসা এমাজউদ্দিন আহমেদের কাছে প্রশ্ন ছিল, নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে বলে তিনি মনে করেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে না যাওয়ার কারণ তো দেখি না। কদিন আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন তারা নির্বাচনে যাবেন। তাদের নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা যাবে না।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপির বেশ কিছু দাবি মেনে নেয়া উচিত বলেও মনে করেন এমাজউদ্দিন আহমেদ। বলেন, ‘তাদের (বিএনপির) দাবি মানবে না কেন? মানতে হবে। তাছাড়া জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য কয়েকটা শর্ত আছে। এই শর্তগুলোও মানতে হবে। কোনো যুক্তিবাদী সরকার হলে মানবেই। তা না হলে তারওপর আন্তর্জাতিক চাপ আসবে।’
কী সেই শর্ত?- এমন প্রশ্নে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ‘নির্বাচন যদি করতে হয়, তাহলে জাতীয় সংসদকে ভেঙে দিতে হবে। এটা যেভাবে আছে সেভাবে নির্বাচন হতে পারে না। হওয়ার কারণ নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন একমাত্র ভারত ছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে কেউ সমর্থন করেনি। ভারত যে এবার গ্রহণ করবে এটা মনে হয় না।’
আরও কিছু শর্তের কথাও বললেন বিএনপিপন্থী এই বুদ্ধিজীবী। বললেন, ‘এখন বিরোধী দলের ওপর পুলিশের যত হামলা হোক না কেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। ওই সময় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যতরাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা-মোকদ্দমা সব তুলে নিতে হবে। তা না হলে ভোটার ভোট দেবে কী করে? আর প্রার্র্থী যে, সে কীভাবে ভোট চাইবে? পুলিশের অনুমতি নিয়ে তো আর এসব করা যাবে না।
‘আমি ফৌজদারি মামলার কথা বলছি না। যেসব মামলা পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে করা হয়েছে, সেগুলোর কথা বলছি। এখন পর্যন্ত সাড়ে চার লাখের বেশি নেতাকর্মী এসব মামলায় হয়রানি হচ্ছে।’
এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আরেকটি শর্ত হচ্ছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য আবহ তৈরি করতে হবে। এটা প্রধানমন্ত্রীকেই করতে হবে। এটা বাইরের কোনো লোক বা বিরোধীদল করবে না। এগুলো একাডেমিক শর্ত। এগুলো পালন না করলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। এর বাইরে অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।’
ভোটারদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিতের কথা বলছেন এমাজউদ্দীন আহমেদ। ‘এক দেড় কোটি না, এই দেশে দশ কোটিরও বেশি ভোটার আছে। এই ভোটাদাতাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেবে না? এটা হলে বিরোধীদল যারা আছে তারা নির্বাচনে অবশ্যই যাবে। বাংলাদেশকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে সহযোগিতা নিতে হবে।’
অন্তবর্তীকালীন সরকার কেমন হতে হবে বলে মনে করেন? ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকারের কিছু দিক আছে। যেমন প্রধানমন্ত্রী তার রুটিন ওয়ার্ক করবেন। অন্য যেসব মন্ত্রণালয় আছে যেমন, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এগুলোর দায়িত্বটা এমন লোকদের দিতে হবে যাকে বিরোধী দল গ্রহণ করে। এই পর্যায়ে সরকারকে আসতে হবে। এগুলো অবশ্যই করতে হবে। সরকারের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য সরকারকে এগুলো করতে হবে। তা না হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।’
এমাজউদ্দিন আহমেদ যেসব শর্তের কথা বলেছেন, তার মধ্যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের প্রসঙ্গ নেই। ২০১৫ সালে তিনি একবার গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে দায়িত্ব নিয়েই বলেছিলেন, কিছু শর্ত পূরণ ও নিশ্চয়তা পেলে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখেই নির্বাচনে আসবে বিএনপি।
খবর৭১/জি: