খবর ৭১: দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানী তেহরান, কেরমানশাহ, রাশত, ইস্পাহান এবং কোমাসহ ১৩টি শহরে সরকারবিরোধী স্লোগানে মুখরিত ছিল কয়েক হাজার মানুষ।
দেশটির দ্বিতীয় জনবহুল শহর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় মাশহাদে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে বিভিন্ন শহরে শহরে তা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থানে ইরান সরকার। বিক্ষোভ চলাকালে ‘কটু স্লোগান’ দেয়ায় ৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইরান সরকার ‘অবৈধ সমাবেশ’ এড়িয়ে চলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। খবর বিবিসি ও এএফপির।
উচ্চ দ্রব্যমূল্য নিয়ে ক্ষুব্ধ লোকজন শুক্রবার মাশহাদের রাস্তায় নেমে এসে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করে। পরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে রাজবন্দিদের মুক্তি ও পুলিশি নির্যাতন বন্ধেরও দাবি জানানো হয়েছে।
প্রথমদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলেও পরে তা সরকারি নীতিবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নেয়। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরানের বড় বড় শহরগুলোতে আন্দোলন বিস্তৃত হয়।
শুক্রবার রাজধানী তেহরানেও বিক্ষোভ হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা ফুটেজে বিক্ষোভ ঘিরে প্রচুর পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভের উদ্দেশে রাজধানীর সিটি স্কয়ারে জড়ো হওয়া অর্ধশতাধিক আন্দোলনকারীদের গ্রেফতারের কথা জানিয়েছেন তেহরানের নিরাপত্তাবিষয়ক ডেপুটি গভর্নর জেনারেল।
বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতারে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা ইরানের জনগণ এবং তাদের মৌলিক অধিকারের দাবি ও দুর্নীতি বন্ধে সমর্থন দিতে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র হুশিয়ারি দিয়ে বলেছে, জনগণের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত ইরান সরকারের, যা ঘটছে তা বিশ্ব দেখছে। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্নীতি এবং জনগণের সম্পদ দিয়ে সন্ত্রাসীদের অর্থ সহায়তা দেয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ইরানিরা। সে কারণেই সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে রাজপথে নেমেছে সাধারণ মানুষ।
২০০৯ সালে বিতর্কিত নির্বাচনের পরে হওয়া বিক্ষোভের চেয়ে এবারের বিক্ষোভকেই জনরোশের সবচেয়ে গুরুতর ও ব্যাপক অভিব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করছেন পর্যবেক্ষকরা। বিক্ষোভের শুরুর দিকে অর্থনৈতিক অবস্থা ও দুর্নীতি আন্দোলনকারীদের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকলেও পরে তা রাজনৈতিক দিকে মোড় নেয়।
দেশজুড়ে বিক্ষোভের জন্য আন্দোলনকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেও ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে অবৈধ সমাবেশের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।
কেবল প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিই নন, আন্দোলনকারীদের স্লোগানের তীর বিস্তৃত হয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনির বিরুদ্ধেও।
বিক্ষোভ হয়েছে ধর্মীয় নেতাদের আবাসস্থল হিসেবে খ্যাত কোম শহরেও। বিক্ষোভকারীদের ‘জনগণ ভিক্ষা করছে, মোল্লারা ঈশ্বরের মতো আচরণ করছে’ জাতীয় স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
সরকারের সমর্থনে পাল্টা শোভাযাত্রা : শুক্রবার ইরানে হাজার হাজার মানুষ সরকারের নীতিবিরোধী বিক্ষোভ করেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তেহরানের রাস্তায় একটি শোভাযাত্রার ছবি দেখানো হয়।
আর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মাসাদে সমর্থকরা দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনির ছবিসহ ব্যানার নিয়ে মিছিল করেছেন। খবর রয়টার্সের।
বৃহস্পতিবার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নেমেছিলেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। শুক্রবার তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ খেরমানসাহ শহরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।