রাণীনগরে বাড়ির ছাদে শখের বাগানে সুস্বাদু কমলা চাষ

0
653

 

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: রাস্তার পাশ দিয়ে যেতেই চোখে পড়বে বাড়ির ছাদের উপরে শখের বাগানের টবে লাগানো কমলার গাছে ঝুলছে সবুজ আর হলদে রঙ্গের বড় বড় কমলা। শুধু কমলা নয় শিমের গাছে শিম, লাউয়ের গাছে লাউ, ঝিঙ্গের গাছে ঝিঙ্গা, লেবুর গাছে লেবু, মরিচের গাছে কাঁচা মরিচ।

এটি হলো নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের (সাফা কোল্ড স্টোরেজের পাশে) পশ্চিম বালুভরা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ির ছাদের উপরে তৈরি করা শখের বাগানের গল্প। বাড়ির ছাদের এই শখের বাগানে গেলেই আরো দেখতে পাওয়া যায় ছোট-বড় মাটির হাড়িতে লাগানো রয়েছে সব্জির মধ্যে শিম, লাউ, বিদেশি ধনিয়া, বেগুন, ঝিঙ্গা, কাগজি লেবু ফলের মধ্যে রয়েছে আম, কমলা, কামরাঙ্গাসহ নানা জাতের গাছ। ছোট্ট কমলার গাছে ধরেছিলো প্রায় ২৬টি বড় বড় কমলা যার মধ্যে আর মাত্র কয়েকটি অবশিষ্ট রয়েছে।

বড় বড় শহরের বাড়ির ছাদে এখন এই শখের বাগান চোখে পড়লেও মফস্বল এলাকায় এই বাগান নেই বললেই চলে। তবে যে ভাবে কৃষি ও আবাদী জমির পরিমাণ কমতে শুরু করেছে এক সময় মফস্বলের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষরাও শহরের দেখাদেখি নিজের বাড়ির ছাদে এই বাগান করতে শুরু করবে। সৌখিন মানুষরা তাদের বাড়ির ছাদে এই শখের বাগান তৈরি করার জন্য কুদ্দুসের কাছে এই বাগান সম্পর্কে জানতে প্রতিনিয়ত আসছে বলে কুদ্দুস জানান।

বাগানের মালিক আফসার আলী প্রামাণিকের ছেলে আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ঢাকা শহরের বাড়ির ছাদের উপর তৈরি করা বাগান আমার খুব ভাল লাগতো। বর্তমানে আমাদের আবাদী জমির পরিমাণ দিন দিন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। তাই আমি, আমার স্ত্রী ও কলেজ পড়ুয়া ছেলে মিলে আমাদের বাড়ির এই ফাকা ছাদটিতে বাগান করে কাজে লাগিয়েছি। প্রথমে আমার ছেলে শখের বসে বগুড়ার এক নার্সারী থেকে কমলা গাছের চারা এনে টবে লাগিয়েছে। এই ছোট্ট কমলার গাছে প্রায় ২৬টি বড় বড় কমলা ধরেছিলো। যার স্বাদ প্রথমে একটু টক হলেও ক’দিন পর খুব মিষ্টি হয়। এছাড়া আমার স্ত্রী মাটির হাড়িতে মাটি দিয়ে রোপন করেছে বিভিন্ন রকমের সব্জি। নিজেদের চাহিদা পূরণ করে বাগানে উৎপাদিত এই সব্জি আশেপাশের লোকজনেরাও এসে নিয়ে যায়। বর্তমানে বাজারের প্রতিটি সব্জি ও ফল রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা উৎপাদিত কিন্তু আমার এই ছাদের বাগানে উৎপাদিত ফল ও সব্জিগুলো বিষমুক্ত যা আমাদের মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি। তাই আমাদের সকলের উচিত আমাদের বাড়ির ছাদ ফেলে না রেখে সেখানে কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী বাগান তৈরি করা। এতে করে আমরা আমাদের বাগানে উৎপাদিত বিষমুক্ত সব্জি ও ফল ইচ্ছেমতো খেতে পারবো এবং দীর্ঘদিন সুস্থ্য ভাবে বাঁচতে পারব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার বলেন, যে ভাবে আমাদের আবাদী জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে এক সময় মানুষ শহরের মতো গ্রামেও নিজ বাড়ির ফাঁকা ছাদে কুদ্দুসের মতো শখের বাগান তৈরি করতে শুরু করবে। ইতিমধ্যে মফস্বল এলাকার কিছু সচেতন মানুষরা বাড়ির ছাদের ফাঁকা জায়গায় কুদ্দুসের মতো এই শখের বাগান তৈরি শুরু করেছে। বর্তমানে বাজারের সকল সব্জি ও ফলে আশঙ্কাজনক হারে ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়নিক দ্রব্য নামক বিষ। এতে আমরা ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। কিন্তু বাড়ির ছাদসহ বাড়ির আশেপাশের পড়ে থাকা ফাঁকা জায়গায় যদি আমরা ছোট ছোট আকারের বাগান তৈরি করি তাহলে সেই বাগান থেকে নিজেদের চাহিদা মতো বিষমুক্ত ফল ও সব্জি খেতে পারি। এই বিষয়ে আমার অফিস থেকে কুদ্দুসকে সব সময় পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। বাড়ির ছাদে এই শখের বাগান তৈরি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্যও আমার কৃষি অফিসের দুয়ার সব সময় খোলা।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here