খবর৭১: ব্লু-ইকোনমি হচ্ছে সাগরের অজস্র জলরাশি ও এর তলদেশের বিশাল সম্পদকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নের স্বপ্ন পূরণে এক অর্থনৈতিক বিপ্লব। আর বিশাল সমুদ্র জয়ের পর এবার সে বিপ্লব বাস্তবায়নের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ায় বাংলাদেশেএক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল, ২০০ নটিক্যাল মাইলের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর্তৃত্ব পায়। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠারও অধিকার পায় বাংলাদেশ।
সমুদ্রের এই অধিকার সূত্রে বিদ্যমান সামুদ্রিক সম্পদকে কাজে লাগানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের কাছ থেকে সমুদ্রসীমা জয়ের ফলে সমুদ্রে আমাদের সীমানা বেড়েছে, তেমনি এ সমুদ্র এলাকায় অনেক সম্পদ রয়েছে। এ সম্পদ ব্যবহারে মানবসম্পদ ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। এরইমধ্যে এ বিষয়ে কার্যকরী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, গভীর সমুদ্রের ন্যায্য অধিকার পাওয়ায় মৎস্য আহরণের বিপুল সম্ভাবনাও দেখছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে, এ অঞ্চলের টুনা মাছ সারা বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়। সুস্বাদু ও দামি এই মাছটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের হোটেলগুলোতে আমদানি করা হয়ে থাকে। টুনা মাছের বিচরণ গভীর সমুদ্রে। মালিকানা অধিকারে বাংলাদেশের ফিশিং ট্রলার এখন গভীর সমুদ্রে টুনাসহ অন্যান্য মাছ আহরণের সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশের সমুদ্র তীরবর্তী ৩ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা আসে মৎস্য আহরণের মাধ্যমে।
মৎস্য আহরণের পাশাপাশি সমুদ্রের তীরবর্তী পর্যটনকেন্দ্রের মাধ্যমেও অর্থনৈতিক বিপ্লবের কথা ভাবছে বাংলাদেশ। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গড়ে এক হাজার হেক্টর করে ভূখণ্ড বাড়ছে। ব্লু-ইকোনমি রূপরেখা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সমুদ্রে ভূখণ্ড (ডেন্টা প্ল্যান) আরও বাড়ানো সম্ভব। কৃত্রিমভাবে বাঁধ তৈরি করে পলিমাটি জমাট/চর জাগানোর মাধ্যমে সৃষ্ট ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে মালদ্বীপের মতো দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলাও সম্ভব। এতে দেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিকতা পাবে।
অতিরিক্ত সচিব ও ব্লু-ইকোনমি সেলের সমন্বয়ক গোলাম শফিউদ্দিন এনডিসি বলেন, মিয়ানমার থেকে সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে আমরা যে জায়গার অধিকারী হয়েছি, সেখানে বিপুল পরিমাণ সমুদ্র সম্পদ আছে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণের জন্য আমাদের সে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। কেননা এসডিজি’র ১৪ নম্বর ধারাই টেকসই উন্নয়নের জন্য সামুদ্রিক সম্পদের অনুসন্ধান ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।
ব্লু -ইকোনমি সেলের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক আরিফ মাহমুদ জানান, সমুদ্র সম্পদ আহরণে বিভিন্ন ক্যাটাগরির কয়েকটা জাহাজ কেনার পরিকল্পনা আছে। এরই মধ্যে দু’টা জাহাজ কেনার চিন্তাভাবনা এগিয়ে যাচ্ছে। একটা হচ্ছে বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ভূতাত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের মাধ্যমে। আমাদের দেশের মাটির নিচে থাকা সম্পদগুলোর আহরণের কাজ ভূতাত্বিক জরিপ অধিদপ্তর দেখে। আর গভীর সমুদ্রে তেল এবং গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স করে।
সাগরের এ সম্পদ আহরণে দেশকে সমৃদ্ধ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে গত বছরের আগস্টে চুক্তি করেছে সরকার। জানা গেছে, এ চুক্তির মাধ্যমে ইইউর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এ ছাড়া সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সমুদ্রসীমার ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভারত ও চীনের সঙ্গে পৃথক সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ।
খবর৭১/জি: