মোঃ জহির রায়হান: সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলায় গ্রামীন ব্যাংক এর ঋণের কিস্তির টাকা দিতে না পেরে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে জরিনা খাতুন (২৮) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। গুরুতর আহত জরিনা খাতুনকে ঢাকা নেয়ার পথে শনিবার রাত একটার দিকে তিনি মারা যান। নিহত জরিনা খাতুন উপজেলার পশ্চিম খাসকাউলিয়া গ্রামের দরিদ্র কৃষি শ্রমিক আব্দুর রউফের স্ত্রী।
তাদের পরিবারে শিশুসহ পাঁচ সন্তান রয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয়রা জানান, যমুনার বার-বার ভাঙনে বিপর্যস্ত জরিনা খাতুন অভাব-অনটনের কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার শাহজানী ভাড়রা ইউনিয়ন শাখা অফিস থেকে চলতি বছরের ৫ মে দুই দফায় ২০ এবং ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এরপর থেকে নিয়মিত সাড়ে ৭০০ টাকা সপ্তাহে কিস্তি দিয়ে আসছিলেন। হঠাৎ শিশু সন্তানদের নিয়ে অভাবের সংসার চালাতে নানা অনটনে পড়ে তার পরিবার। দুই বেলা দুমুঠো খাবার জুটতো না।
রবিবার সকালে ছিল সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা দেয়ার সময়। অভাবের কথা শুনে এনজিও গ্রামীণ ব্যাংকের মাঠ কর্মীরা আগে থেকেই টাকা দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন জরিনা। কোনোভাবেই কিস্তির টাকা সংগ্রহ করতে পারছিলেন না তিনি। তাই আগের দিন শনিবার সকালে কোনো উপায় না বুঝে নিজের ঘর আটকিয়ে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে। এতে শরীরের অধিকাংশ অংশ পুড়ে যায়।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে তাকে দ্রুত ঢাকায় নেবার পরামর্শ দেয় চিকিৎসকরা। পরে ঢাকায় নিয়ে যাবার পথে রাত একটার দিকে তিনি মারা যান।
নিহত জরিনার স্বামী আব্দুর রউফ অভিযোগ করে বলেন, আমাদের অভাব দেখে কিস্তির টাকার জন্য গ্রামীণ ব্যংকের কর্মীরা নানাভাবে আগে থেকেই চাপ দিতেন। অভাবের কারণে টাকা গোছাতে না পেরে আমার স্ত্রী শরীরে কোরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে আতœহত্যা করে।এ বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংক ভাড়রা শাখা ম্যানেজার রঞ্জু আহমেদ বলেন, আমরা টাকার জন্য আসলে অতোটা চাপ দিইনি। জরিনার মৃত্যুর কথা শুনে আমরা তার বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দিয়েছি পাওনা টাকা মওকুফসহ বিমার টাকা পরিবারের কাছে হস্তান্তরের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
চৌহালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান ওসি।