খবর ৭১:
জেরুজালেম নগরীকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যে স্বীকৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তা প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।
ওই স্বীকৃতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটাভুটিতে গৃহীত প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, এই নগরীর মর্যাদার বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত ‘অকার্যকর’ ও ‘বাতিলযোগ্য’।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে জেরুজালেম শহর নিয়ে যে কোনোরকম সিদ্ধান্ত এই ভোটের মাধ্যমে বাতিল বলে গ্রাহ্য হবে।
নামধাম লিখে রাখা এবং অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির পরও, ১২৮টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে, আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ৯টি দেশ। ভোটদানে বিরত ছিল ৩৫টি দেশ। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, সৌদি আরব, জাপানসহ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ।
নন-বাইন্ডিং এই প্রস্তাবটি পালনে আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এটি এক্ষেত্রে জাতিসংঘের নীতিগত অবস্থান তুলে ধরল।
ভোটের আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন যে যারা এই প্রস্তাব সমর্থন করে ভোট দেবে তাদের আর্থিক সহায়তা আমেরিকা বন্ধ করে দেবে। ভোটের আগে ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন তারা যেন আমেরিকার ‘ভীতিপ্রদর্শন ও ব্ল্যাকমেইল’ অগ্রাহ্য করে।
ভোটদানে বিরত দেশগুলোর মধ্যে ক্যানাডা আর মেক্সিকো রয়েছে। ভোটাভুটির পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তারা এই ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করছেন।
জাতিসংঘকে মিথ্যার বেসাতি বলেও তিনি আখ্যায়িত করেছেন।
কোন দেশের সদস্যরা কিভাবে ভোট দিয়েছেন?
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই ভোটাভুটিতে ৯টি দেশ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি দেশগুলো হলো ইসরায়েল, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, দি মার্শাল আইল্যান্ড, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরো, পালাও ও টোগো।
যে ৩৫টি দেশ ভোট দেয়নি, তাদের মধ্যে রয়েছে কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ভুটানের মতো দেশ।
যে ১২৮টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি, ভারত, গ্রিস,ইটালি, নেপাল, নেদারল্যান্ডস, রিপাবলিক অব কোরিয়া (দক্ষিণ কোরিয়া), সিঙ্গাপুর, স্পেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, পর্তুগাল, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, তুরস্ক ও সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্বে মার্কিন সব মিত্র দেশ।
জাতিসংঘের এই প্রস্তাবের তাৎপর্য কি?
১৯৩টি দেশ নিয়ে গঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এটি ছিল বিরল একটি জরুরি অধিবেশন। আরব ও মুসলিম দেশগুলোর আহ্বানে এই অধিবেশনটি ডাকা হয়, যারা ট্রাম্পেরও ওই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে আসছেন।
নিরাপত্তা পরিষদে একই বক্তব্য সংবলিত একটি প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে বাতিল হয়ে গেলে ফিলিস্তিনও এই বৈঠকের আহ্বান জানায়। তুরস্ক আর ইয়েমেনের উত্থাপিত প্রস্তাবটিতে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলা হয়নি, তবে ‘জেরুজালেম প্রশ্নে সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগের কথা’ উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কি?
ভোটের আগে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে জেরুজালেমের চূড়ান্ত মর্যাদা ঠিক হয়ে যায়নি এবং দুই রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাও নাকচ হয়ে যায়নি, অবশ্য যদি তাতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়। ‘ তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটাকে মনে রাখবে যুক্তরাষ্ট্র যে, আমাদের সার্বভৌমত্ব ব্যবহার করায় কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে সাধারণ পরিষদে আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। ‘
নিকি হ্যালি ঘোষণা দেন, ‘আমেরিকা অবশ্যই জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর করবে। কারণ আমেরিকান জনগণ এটাই চায়। এটাই ঠিক, জাতিসংঘের কোনো ভোটাভুটি এটিকে পাল্টাতে পারবে না। ‘
এর আগে বুধবার, প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়া দেশগুলোর ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সহায়তা কাটছাঁটের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ মাসের শুরুর দিকে জেরুজালেম নগরী ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যে প্রস্তাব আনা হয়, তাতে ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪টি দেশই এর পক্ষে ভোট দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে সেটি নাকচ হয়ে যায়। এরপর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একই ধরণের একটি প্রস্তাব তোলা হয়।
জেরুজালেম বিশ্বের মুসলিম, ইহুদি এবং খ্রিষ্টান—এই তিন ধর্মের মানুষের কাছেই খুব গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল এই নগরী দখল করে আছে।
ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের বিরোধ ও সংঘাতের একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে এই জেরুজালেম। ইসরায়েল জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী করলেও এর কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকেই চায়।