মায়ের বয়স ২৫, গর্ভের ‘বাচ্চা’র বয়স ২৪!

0
671

খবর ৭১:বরফে সংরক্ষিত সবচেয়ে পুরনো ভ্রূণ থেকে শিশুর জন্ম হলো। গতমাসে আমেরিকার টেনেসার এক দম্পতি শিশুটিকে পরম আদরে কোলে তুলে নেন।

নভেম্বরের ২৫ তারিখে এমা রেন গিবসনের জন্ম হয়। বিশেষজ্ঞ ড. জেফরি কিনান প্রথম থেকেই তার দেখভাল করছিলেন। ড. জেফরি আমেরিকার ন্যাশনাল এম্ব্রোয়ো ডোনেশন সেন্টারের পরিচালক।

এমার বাবা-মা টিনা এবং বেঞ্জামিন গিবসনকে ভ্রূণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছিলেন সেন্টারের এম্ব্রায়োলজির ল্যাপ ডিরেক্টর ক্যারোল সমারফেল্ট। বরফে সংরক্ষিত ভ্রূণটির বয়সই ছিল ২৪ বছর। এদিকে, টিনার বয়স ২৫। অর্থাৎ, যে মা সন্তানের জন্ম দেবেন, সেই ভ্রূণের বয়স মায়ের চেয়ে ১ বছর কম। টিনা তখন বিশেষজ্ঞকে বলেছিলেন, ‘আমার বয়স ২৫। এই ভ্রূণ আর আমি হতে পারি সবচেয়ে ভালো বন্ধু।

টিনার বয়স এখন ২৬। বললেন, এ ঘটনা বিরল কিনা তা আমি জানি না। এটা রেকর্ড হয়েছে কিনা তাও জানি না। আমার কেবল একটা সন্তান দরকার ছিল।

সমারফেল্টের মতে, এ ঘটনা চিন্তাই করা যায় না। ভ্রূণটি দীর্ঘ সময় ধরে বরফ করে রাখা হয়েছিল। এর আগে ২০ বছরের পুরনো ভ্রূণে সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলো এ ঘটনা।

সুস্থ-সবল বাচ্চা কন্যাশিশু হয়েছে টিনার। ওর ওজন হয়েছে ৬ পাউন্ড ৮ আউন্স। ওর দেহ ২০ ইঞ্চি দীর্ঘ ছিল। আমরা এত খুশি যে বলে বোঝাতে পারবো না। ক্রিসমাসের সময় ও ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ উপহার, আবেগাপ্লুত কণ্ঠের বললেন টিনা।

এদিকে বাবা বেঞ্জামিনও উত্তেজিত। বললেন, এটাকে তার নিজের শিশু বলেই মনে হচ্ছে। যদিও তার ঔরশে হয়নি। কিন্তু স্ত্রীর গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসার পর পরই তিনি বাবার অনুভূতি লাভ করেছেন।

অজ্ঞাত জুটির শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনে গঠিত হয়েছিল এমার ভ্রূণ। ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিতে ভ্রূণ সংগ্রহ করা হয়। তারপর থেকে এটাকে সংরক্ষণ করা হয় যদি ভবিষ্যতে কারো কাজে লাগে। কিন্তু এভাবে টানা ২৪ বছর ধরে অব্যবহৃত থেকে যায় ভ্রূণ।

সাত বছর আগে গিবসন দম্পতি বিয়ে করেন। টিনা জানালেন, তারা স্বামীর ক্রিস্টিক ফিব্রোসিস রোগ ছিল। এতে পুরুষের উর্বরতা নষ্ট হয়। তাই তাদের পক্ষে সন্তান জন্মদান সম্ভব ছিল না। একবার ভেবেছিলেন যে দত্তক নেবেন। কিন্তু ভ্রূণ গ্রহণের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের বিষয়টি মোটেও মন্দ লাগেনি তাদের।

ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের আগে তারা বেশ কয়েকটা শিশুকে লালন-পালন করেছেন। এ কাজে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি। কাজটি করতে ভালো লেগেছে দুজনেরই।

এক ছুটিতে টিনার বাবা তাকে এ খবরটি দেন। বলেন, সম্প্রতি ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের খবর দেখা যায়। এ কাজটি তুমিও করতে পারো। একটা সন্তানের জন্ম দিতে পারো।

টিনা প্রথমে তেমন কিছু ভাবতে পারেননি। আগ্রহবোধ করেননি। বলতে গেলে বিদঘুটে কিছু বলে মনে হয়েছিল তার। ছুটিতে বেড়াতে গেলে স্বামী-স্ত্রী। পুরো রাস্তায় টিনা তার বাবার বলা কথাগুলো মনে করছিলেন। অবশেষে বেঞ্জামিনকে কথাটা বলেন। স্বামীও এ নিয়ে ভাবছেন বলে জানালেন।

গত বছরের আগস্টে সিদ্ধান্ত নিয়ে পারলেন টিনা। বেঞ্জামিনকে বললেন, আমার মনে হয়ে ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের একটা আবেদন করা উচিত। স্বামী আর চিন্তা করেননি। অনলাইনে সঙ্গে সঙ্গে আবেদন ফর্মটি পূরণ করে সাবমিট করলেন।

ডিসেম্বর থেকেই কাজ শুরু হলো। জানুয়ারিতে ভ্রূণটি গ্রহণ করলেন টিনা। দেহ এটাকে মেনে নিতে পারে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে থাকলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাকমতো চলতে থাকলো।

শুধু তাই নয়, এত পুরনো ভ্রূণে সন্তান জন্মদানের বিষয়টি একটা বিশ্ব রেকর্ড হয়ে গেছে। পাশাপাশি প্রথমে দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থাকলেও পরে বিষয়টি অনেক স্বাভাবিক ও ভালো লেগেছে টিনার।
সূত্র : সিএনএন

খবর ৭১/ এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here