সেলিম হায়দার,সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু না করলেও স্ব স্ব দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সাথে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি খোঁজ খবর নিচ্ছেন। চেষ্টা করছেন প্রার্থী হিসেবে নিজেদেরকে মেলে ধরার। তবে এবার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আ’লীগের অন্তত ১ ডজন প্রার্থী ভোটের আগে মাঠ দখলের লড়াইয়ে নির্বাচনী এলাকায় থাকলেও বিএনপি,জাতীয় পার্টি,জামায়াতসহ অন্যন্য দলগুলোর এখন পর্যন্ত একক প্রার্থীরা আলাদা আলাদা নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আগামী নির্বাচন জোটগত ভাবে হলে আ’লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট ও বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পক্ষে প্রার্থী দিলে একাদশ নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আবার নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সরকারি দলের নেতা পরিচয়ে কারো কারো প্রার্থীদের পাল্লাভারি করতেও দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ এদের আবার সিজনাল পাগল বলেও আখ্যায়িত করছেন। কেউ আবার পরিচিতি পাচ্ছেন পোষ্টার সর্বস্ব নেতা হিসেবে। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্বে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) নির্বাচনী এলাকায় ঠিক এমন অবস্থায় এগিয়ে চলেছে নির্বাচনী প্রচারণা।
গত ১০ নির্বাচনে ১৪ দলীয় মহাজোটের স্বার্থে আওয়ামীলীগ আসনটি থেকে ওয়ার্কাস পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে মনোনয়ন দিলে তিনি ১৪ দলের টিকিটে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছিলেন। তবে এবার নির্বাচনে গত ৫ বছরের মূল্যায়নে নিজ দলীয় প্রার্থী চাইছে আ’লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। আর সে কারণে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে প্রার্থী ছড়াছড়ির ঘটনাও এবার বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে। পক্ষান্তরে বর্তমান সংসদ সদস্যের দল ওয়ার্কার্স পার্টি ফের জোটগত আসনটি ধরে রাখতে চায়, মহাজোটের অপর শরিক জাতীয় পার্টি ও জাসদও চায় আসনটি। সেক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে আসনটি নিয়ে মহাজোটে কোন নতুন সংকট তৈরী হয় কিনা তাই এখন দেখার বিষয়।
তবে বিপরীত ঘরানায় একক প্রার্থী হিসেবে অনেকের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। তবে তাদের উপরও প্রার্থিতা নিয়ে ছড়ি ঘুরাচ্ছে তাদের জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী। তাদের দাবি গতবার বিএনপিকে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী দিলেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে বিএনপি’র দাবি ভিন্ন। তাদের সাফ কথা,গতবারের এক তরফার নির্বাচনের পর বিএনপি’র অবস্থান এখন অন্য যেকোন দলের চেয়ে ভাল। তাই আসনটি শরীকদের মধ্যে বন্টন করে নতুনভাবে এখানে তারা আশংকা তৈরী করতে চাননা।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আ’লীগের যেসকল সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন,জেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি সাংসদ প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান,তালা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম, তালা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার,কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ন-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম,কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন, জেলা আ’লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সরদার মুজিব, জেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র,জেলা মহিলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি,জেলা কৃষকলীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু, কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সরদার আমজাদ হোসেন ও এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন। তবে প্রার্থীদের কাতারে সন্তুষ্ট নন খোদ ক্ষমতাসীনরাই। তাদের দাবি,এ্যাডঃ মোহাম্মদ আলীর মত প্রার্থী যিনি নিজেকে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবি পরিষদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য,সাবেক সভাপতি,তালা উপজেলা সমিতি পরিচয় দিয়ে আ’লীগের দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় পোষ্টার সেটেছেন দেয়ালে দেয়ালে। কোন কোন এলাকায় মটর সাইকেল শ্রমিকদের কথিতদের নিয়ে পায়চারিও করছেন। যাকে এলাকার কোন নেতা-কর্মী তো দূরের কথা,ভোটারদের কেউই নাম শোনেনি। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চান সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখ্ত। মাঠে রয়েছেন জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলু,জেএসডি’র কেন্দ্রীয় নেতা মীর জিল্লুর রহমানও।
বিএনপির একক প্রার্থী জেলার সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। দলটির তালা-কলারোয়ার নেতা-কর্মীরা তাকেই দলীয় প্রার্থী দেখতে চান। অন্যদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্যাহ এ আসনের ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীতা চান। তবে মাঠে ময়দানে তার প্রচার-প্রচারণা কম ও জনগণের কাছেও তিনি অপরিচিত মুখ।
সর্বশেষ আ’লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা চান শরিক দলের কাউকে নয়, সাতক্ষীরা-১ আসনে দলীয় যে কাউকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘১৯৬২ সাল থেকেই তিনি গণমানুষের রাজনীতি করছেন। সংসদ সদস্য থাকাকালে তালা-কলারোয়ার পাশাপাশি সমগ্র সাতক্ষীরার উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। যার সুফল মানুষ এখনও ভোগ করছেন। এজন্য মনোনয়নের ব্যাপারে আগামী নির্বাচনে আ’লীগ থেকে মনোনয়নের ব্যাপারে ১০০% আশাবাদী তিনি।
আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন,আগামী নির্বাচন যদি হয় কোন চ্যালেঞ্জের নাম তবে আমি সেই চ্যালেঞ্জ,এলাকার সাধারণ জনগণও চাচ্ছে একজন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী সে হিসেবে দলই বিবেচনা করবে বিষয়টি। তবে দলের বৃহত্তর স্বার্থে যাকে মনোনয়ন দেবে তিনি তার পক্ষেই কাজ করবেন বলে জানান এ কেন্দ্রীয় নেতা।
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি বলেন, ‘তার বাবা শহীদ স.ম আলাউদ্দিন মৃত্যুর দিন পর্যন্ত জনগণের জন্য কাজ করেছেন। বাবার মতো মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চান তিনিও।’
তালা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম বলেন,গত নির্বাচনে দল তাকে চুড়ান্ত মনোনয়ন দিলেও শেষ মূহুর্তে মোর্চার স্বার্থে আসনটি ছাড় দিতে হয় তাকে। তাই এবার প্রার্থী নির্বাচনে দলের বিশেষ নজর থাকবে তার দিকে এবং সেটাই স্বাভাবিক বলেন তিনি।
বর্তমান সংসদ সদস্য মুস্তফালুৎফুল্লাহ বলেন,এমপি হওয়ার পর থেকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন তিনি। এজন্য এবারও মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। সৈয়দ দিদার বখত বলেন, জাতীয় পার্টি তাকেই মনোনয়ন দেবে। কারণ,তিনি ছাড়া দলের কোনো বিকল্প প্রার্থী নেই।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি। নির্বাচন নিয়ে তার একটাই কথা,পূর্বে জনগণের জন্য কাজ করলে আবারও তারা তাকেই ম্যান্ডেট দেবে।
সব মিলিয়ে জাতীয় নির্বাচনের এক বছর আগেই আসনটি মূলত নির্বাচন জ্বরে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে অন্তত তেমনটাই মনে হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি জনগণেরও ভাবনার বিষয়, আগামী নির্বাচন ১৪ দলীয় মহাজোটের জন্য চালেঞ্জ থাকবে আসনটি ধরে রাখার আর ২০ দলীয় জোটের জন্য পুনরুদ্ধারের। তবে উভয় শিবিরে গোঁদের উপর বিঁষ ফোঁড়া হিসেবে থাকছে প্রার্থী নির্বাচনে শরিকদের সন্তুষ্টি আর অসন্তুষ্টি নিয়ে। ঠিক এমন অবস্থায় আসনটিতে ভোটের আগে মাঠের লড়াইয়ে কি হয় তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে শেষ সময় পর্যন্ত।
খবর ৭১/ ই: