খবর৭১:রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসার শরীর চর্চা বিষয়ক শিক্ষক ও বর্তমানে মাদ্রসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মো: হারুনুর রশিদের চাকরির বৈধতার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি বিধান অনুযায়ী এই পদে নিয়োগ পেতে হলে অবশ্যই সেই প্রার্থীকে ¯œাতকসহ বিপিএড কোর্স সম্পন্নকারী হতে হবে। বিধি মতে ¯œাতকসহ বিপিএড সনদপত্র ছাড়া এবং শিক্ষাজীবনের কোন পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে পাশ করা প্রার্থী এই পদে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা রাখেনা। অথচ বর্তমানে অবৈধ ভাবে নিয়োগ পাওয়া একজন জুনিয়র সহকারি শারীরিক শিক্ষক পেশীবলের জোরে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
গোপন সূত্রে জানা, মো: হারুনুর রশিদ তৎকালিন সময়ে মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সম্পাদকের যোগসাজগে নীতিমালা লঙ্ঘন করে শুধুমাত্র তৃতীয় বিভাগে পাশ করা এইচএসসি ও জুনিয়র ডিপ্লোমা এডুকেশন পাশের সনদপত্র দিয়ে শারীরিক শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ গ্রহন করেন। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ছাড়াই শরীর চর্চা শিক্ষক পদে মন্ত্রণালয় তাকে নিয়োগ না দেওয়ায় তিনি তৎকালীন বিএনপি’র সংসদ সদস্যের সহযোগিতায় মাদ্রাসার প্রাথমিক এফতেদায়ী বিভাগের জুনিয়র সহকারি শারীরিক শিক্ষকের পদে নিয়োগ দিয়ে অবৈধভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করার সুযোগ করে দেন। কিন্তু সরকারি বিধি অনুসারে কোন মাদ্রাসাতেই জুনিয়র সহকারি শারীরিক শিক্ষকের পদ নেই। এরপর থেকেই শুরু হয় তার অবৈধ কর্মকান্ড। বিভিন্ন কৌশলে মাদ্রাসার দীর্ঘদিনের সুপারকে সরিয়ে দিয়ে বর্তমানে তিনি মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব পালন করাসহ মাদ্রাসার সবকিছু নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে অবৈধভাবে শাসন করছেন এই ইসলামী প্রতিষ্ঠানটি। হারুন প্রভাবশালী হওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানের কেউ তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে পারেন না। এক সময়ের বিএনপি’র সাংসদ আলমগীর কবিরের খুব কাছের মানুষ বর্তমানে খোলষ পাল্টে হয়ে গেছেন আ’লীগের খাস লোক। আর এই প্রভাবেই তিনি প্রতিষ্ঠানে নিজের ইচ্ছে মতো সব কিছু করে যাচ্ছেন। একাধিকবার কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন ফল পাওয়া যায়নি। অবৈধ পদে চাকরি করে এই প্রভাবশালী হারুন হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা আর সরকার হারাচ্ছে তার রাজস্ব। যেন দেখার কেউ নেই।
দীর্ঘদিন পর হারুনের বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কারণে এই বিষয়টি যাচাই-বাছাই করার জন্য গত ২০১৫ সালে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তৎকালীন মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ কে প্রধান করে ৫সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি দীর্ঘদিন তদন্ত করে তার জমা দেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্রের কোন মিল না পাওয়াই, নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোন কাগজপত্রের মিল না পাওয়াই, সহকারি শিক্ষক পদে ১০ অথবা ১১ কোর্ডের তার এমপিও হয় নাই, পরবর্তিতে ১৬ কোর্ডের তার এমপিও হয়। নিয়োগপত্র ও যোগদান পত্রে তার পদবীর সঙ্গে এমপিও কোর্ড মিল না পাওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের ভিত্তিতে কমিটি তার নিয়োগকে অবৈধ বলে প্রতিবেদন ফলাফল প্রদান করলেও এখন পর্যন্ত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারেনি । বরং হারুনের আচার-আচরনে দেখে মনে হয় সকল সরকারি দপ্তর তার হাতে জিম্মি। সে যা বলবে তাই হবে।
জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের সরকারি বিধি অনুযায়ী মাদ্রাসার শরীর চর্চা শিক্ষক পদে নিয়োগে জন্য অবশ্যই প্রার্থীকে ¯œাতকসহ বিপিএড অথবা ¯œাতকসহ জুনিয়র ডিপ্লোমা/ফিজিক্যাল এডুকেশন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে এবং সকল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ থাকতে হবে। এই সব শর্তের একটি পূরণ না হলে সে ওই পদের অযোগ্য হবে মর্মে আইনজারী করা হয়। কিন্তু এই প্রভাবশালী ব্যক্তি এইচএসসিতে তৃতীয় বিভাগ অর্জন করেন এবং ২০০৭ সালে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস (¯œাতক) ডিগ্রি এবং ২০০৮ সালে বিপিএড ডিগ্রি অর্জন করেন। এক সময়ের তুখোর এই বিএনপি নেতা সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে পদের যোগ্য না হয়েও উচ্চ পদের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন দীর্ঘদিন যাবত।
মাদ্রাসা সুত্রে জানা, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ১৫ ডিসেম্বর ১৯৯৫ সালে বগুড়া থেকে প্রকাশিত “দৈনিক উত্তরবার্তা” পত্রিকায় উচ্চ মাধ্যমিক/আলিমসহ জুনিয়ন ডিপ্লোমা ইন ফিজিক্যাল এডুকেশন পাশ হতে হবে মর্মে একটি শরীরিক শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠান কিন্তু জুনিয়র সহকারি শারীরিক শিক্ষক পদের জন্য নয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকশের পর মো: হারুনুর রশিদ আবেদন করেন। আবেদনের দ্বিতীয় বিভাগে উর্ত্তীণ এসএসসি, তৃতীয় বিভাগে উর্ত্তীণ এইচএসসি ও দ্বিতীয় বিভাগে উর্ত্তীণ জুনিয়র ডিপ্লোমা পাশের সনদপত্র দাখিল করেন এই প্রভাবশালী হারুনুর রশিদ।
সরকারি বিধি অনুযায়ী প্রাপ্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে যে কোন পদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য অবশ্যই বাছাই কমিটি গঠন, নিয়োগ বোর্ড গঠন, নিয়োগ বোর্ডের ফলাফলসহ রেজুলেশন লেখা, নিয়োগ পত্র ইস্যুর জন্য মুল কমিটি গঠন করার বিধান তৎকালীন সময়ে ছিলো। কিন্তু সেই সময়ের মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারন সম্পাদকের যোগসাজসে এবং সেই সময়ের বিএনপি’র সাংসদ আলমগীর কবিরের স্বজনপ্রীতিতে কোন রেজুলেশন না লিখে এবং কোন প্রকারের কমিটি গঠন না করে সেই সময়ের বিএনপির সংসদ সদস্যের সার্বিক সহযোগিতায় তাকে ২৮ মার্চ ১৯৯৬ সালে শারীরিক শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
তার বিরুদ্ধে শত শত অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সে এই প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে নিজের আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন। তিনি প্রতিটি পরীক্ষায় তার কেন্দ্রকে নকলের কারখানা হিসেবে ব্যবহার করে সকলকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিজেই আর্থিক ফায়দা গ্রহণ করছেন। সম্প্রতি তার কেন্দ্রের নকল সরবরাহ করার বিষয়ে দেশের জাতীয়সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়াও পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন বাহানায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা, দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় অতিরিক্ত ফ্রি আদায় করা তার কাছে নিয়মিত বিষয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান মো: আবুল কালাম আজাদ জানান, আমরা দীর্ঘদিন তদন্ত করে যা পেয়েছি তাই আমাদের প্রদান করা তদন্ত প্রতিবেদনে লেখা রয়েছে। তবে তদন্ত করতে গিয়ে অনেক কিছুরই মিল পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে রাণীনগর আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসার জুনিয়র সহকারি শরীর চর্চা শিক্ষক ও মাদ্রাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সুপার মো: হারুনুর রশিদ জানান, আমার নিয়োগের বৈধতার সকল কাগজপত্র আমার কাছে আছে। আপনারা চাইলে তা যাচাই-বাছাই করতে পারেন।
রাণীনগর আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো: কারিমুল্লাহ প্রামাণিক জানান, এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। হারুন এই বিষয়ে ভালো বলতে পারবে। আপনারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আতাইকুলা জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: জালাল উদ্দিন জানান, আমার জানা মতে মাদ্রাসার শিক্ষক হিসাবে হারুনের নিয়োগ সম্পন্ন ভাবে নিয়ম বর্হিভ’ত ও অবৈধ। সে প্রথমে নিয়মবর্হিভ’ত ভাবে শারীরিক শিক্ষক পদে নিয়োগ নেওয়ার পর যখন সুবিধা করতে পারেননি তখন সে তৎকালীন বিএনপি’র এমপির মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের এফতেদায়ী বিভাগের জুনিয়র শিক্ষকের পদে অবৈধ ভাবে নিয়োগ গ্রহণ করে। আসলে তারতো নিয়োগই অবৈধ সে কিভাবে ওই মাদ্রাসার সুপারের দায়িত্ব পালন করে এটা বোধগম্যে আসে না। সত্যিই কি তাহলে কর্তৃপক্ষ তার হাতে জিম্মি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মো: আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, জুনিয়র শিক্ষক হিসাবে তার নিয়োগটি বৈধ কিন্তু সুপার পদে দায়িত্ব তিনি পালন করতে পারেন না। স্থানীয় সংসদ সদস্যের ও মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমতি সাপেক্ষে বর্তমানে তিনি ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব পালন করছেন।
খবর৭১/জি: