মোঃ জহির রায়হান.সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
জেএসসি, জেডিসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চলাকালীন সময়ের মাঝেই উদ্বোধন করে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার সাহেবগঞ্জ বাজারে হেমন্ত মেলার নামে চালানো হচ্ছে অবাধে যাত্রা এবং লাখ লাখ টাকার জুয়া ও হাউজি খেলা। এদিকে মেলাকে ঘিরে এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী। অপরদিকে আসন্ন প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে এলাকার সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের কোলঘেঁষে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার সাহেবগঞ্জ বাজারে গত ২২ নভেম্বর-২০১৭ইং তারিখে হেমন্ত মেলা উদ্বোধন করা হয়। প্রায় তিনমাসের জন্য বি.বাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেন ও বগুড়া জেলার ধুনটের বাসিন্দা মাসুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ও সাহেবগঞ্জ এলাকার প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে এ মেলা শুরু হয়। হেমন্ত মেলায় কৃষিজ পণ্যের কোনো স্টল নেই। এমনকি মেলায় চিরায়ত গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। মেলায় চলছে শুধু ডাব্বা জুয়া, ওয়ানটেন জুয়া, ৫ হাজার চেয়ার বিশিষ্ট হাউজি খেলা এবং ২ হাজার আসন বিশিষ্ট বিশাল প্যান্ডেল জুড়ে যাত্রার নামে অশ্লীল নাচ-গান ও নৃত্য। তৈরী করা হয়েছে বিশাল লাকী কূপন লটারীর প্যান্ডেল। অসংখ্য জুয়ার পসরা বসার দৃশ্য দেখে মনে হয় এ যেন মেলার নামে বসেছে জুয়ার হাট। সম্প্রতি গত ২১ নভেম্বর সিরাজগঞ্জের অফিসার্স ক্লাবে গ্রাম আদালত প্রকল্পের চলমান কার্যক্রম অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় সরকারের ভাবমূর্তি যাতে কোনক্রমেই ক্ষুন্ন না হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখে ও সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার স্বার্থে সিরাজগঞ্জ জেলার কোথাও যাতে মেলা বা অন্য কিছুর অজুহাতে অশ্লীল নাচ-গানসহ জুয়া হাউজি চলতে না পারে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকাসহ জেলার অধিকাংশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানগণের উপস্থিতিতে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না। কিন্তু তাঁর সেই নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে সলঙ্গা থানার সাহেবগঞ্জ বাজারে শুরু করা হয়েছে অশ্লীল নাচ-গান জুয়া এবং হাউজি। আর কয়েকদিন পরেই শুরু হচ্ছে হাইস্কুল, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা। অথচ সেই সময়েই উচ্চ শব্দে চলছে সেখানে নাচ গান জুয়া হাউজি এবং অসামাজিক কার্যক্রম। তাহলে কিভাবে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা বাড়ীতে বসে উচ্চ হারে মাইকের শব্দে পড়াশোনা করবে এবং কি প্রস্তুতি নেয় বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে ফলে কোমলমতি ওই সকল ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের দিক লক্ষ্য রেখে তাদের খেটে খাওয়া অভিভাবকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী অবিলম্বে হেমন্ত মেলাটি বন্ধের দাবী জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, হেমন্ত মেলার নামে যে জুয়া-যাত্রা আর হাউজি খেলা শুরু হয়েছে তাতে এধারা অব্যাহত থাকলে এলাকার সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিসাধিত হবে এবং এলাকার উঠতি বয়সী যুবকেরা বিপদগামী হয়ে পড়বে। ফলে তাদেরকে নিয়ে উদ্বিগ্ন আর উৎকণ্ঠায় রয়েছে অভিভাবকেরা। শুধু তাই নয় জেএসসি, জেডিসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কিভাবে এ মেলার অনুমোদন পেলো এবং পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কিভাবে মেলাটি উদ্বোধন করা হলো তা নিয়েও চলছে এলাকায় নানা আলোচনা-সমালোচনা।
এ বিষয়ে হেমন্ত মেলার মালিক মোঃ বেলাল হোসেন জানান, অনুমোদন নিয়েই মেলাটি পরিচালনা করা হচ্ছে এবং অনুমোদন নিয়েই যাত্রা-জুয়া ও গান চালানো হচ্ছে।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল আখতার জানান, মেলাটির অনুমোদন আছে। তবে যাত্রা-জুয়া ও হাউজির বিষয়ে আমাদের জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।
খবর ৭১/ এস: