শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা) প্রতিনিধি:
ভারতের কলকাতা চিৎপুর স্টেশন থেকে এসটিএফ’র অভিযানে আল কায়েদা জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া ৩ জনের এক জন রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ(২৫)’র বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির কাশিমনগর গ্রামে। তার পিতা এক জন ক্ষুদ্র পান ব্যবসায়ী। পারিবারিক সূত্র জানায়, বছর দুয়েক হল সে তার এক খালু শ্বশুরের সাথে ভারতে যায় কাজের সন্ধানে। এর পর হাটুর ব্যথায় মাস দুয়েক আগে বাড়ি এসেছিল। প্রায় সপ্তাহ দু’য়েক থেকে পুনরায় ডাক্তার দেখাতে ভারতে গিয়ে আর ফেরেনি। এরপর গত মঙ্গলবার বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও অনলাইন দৈনিকে কোলকাতা পুলিশের হাতে তার গ্রেফতারের খবরে রীতিমত মুষঢ়ে পড়েছে গোটা পরিবার।
এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোটর সাইকেল যোগে দু’জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি বুধবার দুপুরে রিয়াজুলের গ্রামের বাড়ি কাশিমনগর থেকে নিজেদের মানবাধিকার কর্মী পরিচয়ে তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ও এক প্রতিবেশী আঃ রাজ্জাক শেখের ছেলে রাসেল (২২) ডেকে নিয়ে গেছে। তবে এব্যাপারে স্থানীয় পুলিশের কাছে নেই কোন তথ্য। কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) তদন্ত মোঃ রফিকুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানেননা বলে জানান।
মঙ্গলবার বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও অনলাইন দৈনিকে ফলাও করে খবর প্রকাশিত হয় যে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর কাছ থেকে খবর পেয়ে কোলকাতা এসটিএফ সেখানকার চিৎপুর স্টেশনে তল্লাশি করে। এক পর্যায়ে দুই জন বাংলাদেশের সুনাম গঞ্জের বাসিন্দা সামসাদ মিঞা ওরফে তানভির ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬) ও খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের কাশিমনগর গ্রামের রিয়াজ ওরফে রিয়াজুল ইসলাম ওরফে সুমন (২৫)। আর ৩য় জন ভারতের উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাটের খোলাপোতার মনোতোষ দে (৪৬) কে গ্রেফতার করে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে কোলকাতা পুলিশের ডিসি মুরলিধর শর্মা জানান, ধৃতরা অস্ত্র কেনাবেচার জন্য কোলকাতা স্টেশন চত্বরে এসেছিল। প্রায় দেড় বছর ধরে বাংলায় ঘাঁটি গেড়েছিল আটক দুই বাংলাদেশি আল কায়েদা জঙ্গি। পুলিশের ঐ কর্মকর্তা আরো জানান, বসিরহাটের মনোতোষ দে’ই মূলত অস্ত্র সরবরাহ করত। আটককৃতরা এদিন কোলকাতা স্টেশনে এসেছিল অস্ত্র কেনা-বেচা নিয়ে কথা বলতে, সেই খবর আগে থেকেই ছিল এসটিএফের কাছে। সেই মতোই জাল বিস্তার করেন সেখানকার গোয়েন্দারা। শেষমেশ তাদের হাতে আটক হয় তিন জঙ্গি। এসময় ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় অত্যাধুনিক ওয়ানশাটার-সহ একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র। উদ্ধার হয় আল কায়েদা সম্পর্কিত বই, ল্যাপটপ ও পেনড্রাইভ। আলকায়েদার লিফলেটও পাওয়া যায় তাদের কাছ থেকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ওই বইয়ে লেখা ছিল জেহাদের কথা। কী করে তারা রেইকি করবে, কী করে বিস্ফোরক তৈরি করবে- সেসব ছিল ল্যাপটপ ও পেনড্রাইভে। ডিসি জানান, ধৃত তিনজনই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। এই আনসার বাংলা হল আল কায়েদার শাখা সংগঠন। ধৃত দুই বাংলাদেশির কাছে কোনও পাসপোর্ট ও ভিসা ছিল না। তবে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ব্যাঙ্কের পাশবই, আধার কার্ড, প্যানকার্ড, ভিজিটিং কার্ড। এসবই ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করেছিল তারা।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর সূত্রে পুজোর সময় এ বিষয়ে এসটিএফকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল কোলকাতায় জঙ্গি অনুপ্রবেশ হয়েছে বলে। সেই থেকেই নানা হোটেল, রেস্তোরা, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনে গোপনে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন সেখানকার গোয়েন্দারা কিন্তু কিছুতেই হদিশ মিলছিল না খতরনাক জঙ্গিদের। এসটিএফের কাছে তিন-চারদিন আগে খবর আসে, কোলকাতায় লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা আর্মস ডিলার্সদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সেই মতোই অভিযানের গতি মুখ বদল করেন কলকাতার গোয়েন্দারা। মনোতোষ ছিল মূলত আর্মসড ডিলার। সামসাদ ও রিয়াজ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতেই কলকাতা স্টেশনে এসেছিল। ডিসি মুরলীধর শর্মা জানান, ধৃত জঙ্গিরা কখনই হোটেলে থাকত না, তাঁরা বিভিন্ন স্টেশনে, যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে রাত কাটাত। তারপর বাকি সময়টা এখানে-ওখানে ঘুরেই নাকি কাটাত তারা।
এদিকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাইকগাছার কাশিমনগর গ্রামের রিয়াজের আটকের খবরে বুধবার তাদের বাড়িতে গেলে কথা হয় রিয়াজের পিতা মোসলেম সরদারের সাথে। তিনি জানান,তার ৩ ছেলে মফিজুল সরদার,সিরাজুল সরদার ও রিয়াজুল সরদার। এদের মধ্যে রিয়াজুল সবার ছোট। সে কয়েক বছর আগে কপিলমুনি জাফর আউলিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করার পর অর্থাভাবে আর পড়া-লেখা করেনি। এর পর সাতক্ষীরার টিকারামপুরের জনৈক আছির উদ্দিন খাঁর মেয়েকে বিয়ে করে। এরপর প্রথমত বাড়িতে পানের বরজের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। তবে বছর দুয়েক আগে তার এক খালু শ্বশুরের পরামর্শে স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে জাহিদকে বাড়িতে রেখে ভারতে ভাটায় যায় কাজ করতে। মাস দু’য়েক পূর্বে রিয়াজুল বাড়িতে আসে পায়ের ব্যাথা নিয়ে। প্রায় সপ্তাহ দু’য়েক থাকার পর ডাক্তার দেখাতে পুনরায় ভারতে গিয়ে আটক হয় সে। রিয়াজুলের পিতা মোসলেম সরদারের ধারণা,ভিসা ও পার্সপোর্ট নাথাকায় ভুল বশত সন্দেহভাজন কোলকাতা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থাকতে পারে।
খবর৭১/এস: