নড়াইলের হিন্দু সম্প্রদায় ভারতে পাড়ি জমানোর পর স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও গড়ে ওঠেনি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোমলমতি শিশুরা শিক্ষা বঞ্চিত!

0
466

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■(২৭৪ মোবা:০১৯৭৫-৯০৯৪৭২)
নড়াইল শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার পশ্চিমে নবগঙ্গা নদীর উত্তর পাশে অবস্থিত শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত বাড়িভাঙ্গা গ্রামের শিশুরা, গ্রামের নাম বাড়িভাঙ্গা। যে গ্রামে স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও গড়ে ওঠেনি কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত এই গ্রামের কোমলমতি শিশুদের সময় কাটে কাঁচের মার্বেল ও গ্রামীণ খেলাধুলা করে। একটু বয়স্কদের সময় কাটে তাস ও কেরামবোর্ড খেলে এবং চায়ের দোকানে টেলিভিশনে সিনেমা দেখে। বিস্তারিত আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোর্টে, নড়াইল জেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের বাড়িভাঙ্গা গ্রামটি শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার পশ্চিমে নবগঙ্গা নদীর উত্তর পাশে অবস্থিত। এছাড়া নড়াইল জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই গ্রামটি। গ্রামটির পশ্চিম পাশ দিয়ে জেলার সর্ববৃহৎ ইছামতি বিলের সঙ্গে নবগঙ্গা নদীর সংযোগ স্থাপনকারী বাড়িভাঙ্গাটি দেশীয় প্রজাতির মাছের ভান্ডার হিসেবে গুরুত্ব বহন করে আসছে। বাড়িভাঙ্গা গ্রামের নামকরণ কিভাবে হয়েছে তা কেউ স্পষ্টভাবে বলতে পারেননি। তবে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া যায় যে, এক সময়ে এই গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। পরবর্তীতে হিন্দু সম্প্রদায় ভারতে পাড়ি জমানোর পর মুসলমানরা বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে এই গ্রামের বসবাস শুরু করে। সম্ভবত সে কারণেই গ্রামটির নাম বাড়িভাঙ্গা করা হয়েছে। বাড়িভাঙ্গা গ্রামে দেড় শতাধিক পরিবারের বসবাস রয়েছে। এই গ্রামের পূর্বদিকে রায়গ্রামের অবস্থান। বাড়িভাঙ্গা থেকে রায়গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব অন্তত চার কিলোমিটার। দক্ষিণে নবগঙ্গা নদী। পশ্চিমে ব্রাহ্মণডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং উত্তরে হান্দলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব দুই কিলোমিটারের বেশি। তাও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় শিশুরা এসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। তবে শত প্রতিকূলতার মধ্যদিয়েও এই গ্রামের কিছু ছেলে-মেয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে চাকরি করছেন। বাড়িভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মোক্তার হোসেন (৭০) জানান, এই গ্রামে স্থাপনা বলতে দুটি মসজিদ এবং ছোট ছোট ২/৩টি খুপরি ঘরের দোকান রয়েছে। নেই কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান এবং খেলার মাঠ। যার কারণে এই গ্রামে শিক্ষার হার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ। যারা লেখাপড়া শিখেছে তারাও চাকরি এবং পরিবেশগত সমস্যার কারণে শহরে চলে গেছে। এই গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য জানান, এই গ্রামে কয়েক বছর আগে একটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। ৪/৫ বছর ধরে পড়াশোনা করানোর কারণে কিছু ছেলেমেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। পরে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আবারও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার গতি থেমে গেছে। এই গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলে ছেলে-মেয়েরা অন্তত ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারতো। এই গ্রামের কলেজ ছাত্র জানান, তিনি অনেক কষ্টে এখন নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে বাংলা বিষয়ে অনার্স পড়াশোনা করছেন। তবে গ্রামের অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। এই গ্রামের শিশুরা কাঁচের মার্বেল ও কিছু গ্রামীণ খেলাধুলা করে সময় কাটায়। যুবকরা কেরামবোর্ড ও তাস খেলার মধ্যদিয়ে বড় হয়। গ্রামে খেলার মাঠ বলতে কিছুই নাই। কৃষি জমিতে ধান কাটার পর কিছুদিন পতিত থাকলে সেখানে ফুটবল খেলা করা ছাড়া বিকল্প কোনো সুযোগ নেই। এই গ্রামের সন্তান, দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে থাকার পর তিনি এখন নড়াইল শহরে মুদিখানার ব্যবসা করেন। ছেলে-মেয়েকে নড়াইল শহরের ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেছেন। তিনি জানান, ওই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষিত হওয়ায় ভিলেজ পলিটিক্স নিয়ে চর্চা বেশি। এই গ্রামের বাসিন্দা জানান, স্কুল না থাকায় তার চার ছেলেমেয়ের কেউ পড়াশোনা শিখতে পারেনি। দুই ছেলে বর্তমানে ইজিবাইক চালায় এবং দুই মেয়েকেই অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। এখন নিজে চাসহ ছোট একটি মুদিখানার দোকান দিয়ে সংসারে খরচ বহন করছেন। তিনি বলেন, গ্রামে একটি স্কুল থাকলে ছেলে-মেয়েগুলো পড়াশোনা শিখে চাকরি করতে পারতো। ফলে আজ এতো বেশি কষ্ট করতে হতো না। প্রতিবেশী ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের শিক্ষক জানান, বাড়িভাঙ্গা গ্রামে স্কুল না থাকায় থেকে৬/৭ বছর আগে সরকারের পক্ষ থেকে স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও ৩৩ শতক জমি গ্রামবাসী দিতে না পারায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হয়নি। এখনও ৩৩ শতক জমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে লিখে দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ রয়েছে। ৩৩ শতক জমির দাম পড়ছে ৬ লাখ টাকার মতো। নোয়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, স্কুলের জন্য ৩৩ শতক জমির মূল্য ৬ লাখ টাকার বেশি। জমির এই উচ্চমূল্যের কারণে এখন আর কেউ বিনামূল্যে জমি দিতে রাজি হয় না। বাড়িভাঙ্গা গ্রামবাসীর পক্ষেও ৬ লাখ টাকা যোগাড় করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে মানবতার সেবক-দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর রহমান, আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে বলেন, দেড় হাজার জনসংখ্যা আছে এমন এলাকা বা গ্রামে এবং দুই কিলোমিটারের মধ্যে স্কুল না থাকলে সে এলাকায় ৩৩ শতক জমি স্কুলের নামে দলিল করে দিলে সরকারিভাবে স্কুল প্রতিষ্ঠার সুযোগ রয়েছে।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here