ইসলামের দৃষ্টিতে চুল ও দাড়িতে কলপের ব্যবহার

0
647

খবর৭১:বার্ধক্য মানবজীবনের এক অনিবার্য বাস্তবতা। বেঁচে থাকলে প্রত্যেকটি মানুষ বৃদ্ধ হবেন এটাই আল্লাহর বিধান। বার্ধক্য এলে অনেকের চুল-দাড়ি ধবধবে সাদা হয়ে যায়। সাদা দাড়িওয়ালা অনেকে দাড়ি ও চুলে খেজাব বা মেহেদি ব্যবহার করেন। আবার বার্ধক্যজনিত কারণ ছাড়াও অপরিণত বয়ইে অনেক যুবকের মাথার চুল পেকে যায়। চুল কালো করতে তারাও বিভিন্ন পদ্ধতির আশ্রয় নেন। চুল-দাড়িতে কলপ, খেজাব বা মেহেদি যাই হোক, তা ব্যবহারের আগে মুসলমানদের উচিত ইসলামের দৃষ্টিতে তা কতটা বৈধ তা জেনে নেওয়া।
বার্ধক্যজনিত কারণে কারো চুল-দাড়ি পেকে গেলে তাতে খেজাব ব্যবহার করা বৈধ। তবে তা কালো খেজাব হতে পারবে না। নবীজি (সা.) মূলত মেহেদি বা এ ধরণের রঙের কোনো জিনিস দ্বারা চুল-দাড়ি রাঙাতে উৎসাহ দিয়েছেন। হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মক্কা বিজয়ের দিন নবীজি (সা.) হজরত আবুবকরের পিতা আবু কুহাফার (রা.) চুল-দাড়ি পাকা দেখে তাকে বললেন, ‘এটাকে কোনো কিছু দ্বারা পরিবর্তন করো।

তবে কালো থেকে বিরত থাকো। ’ (সহিহ মুসলিম : ৫৪৬৬)। এ হাদিসে কালো ছাড়া মেহেদি রঙ বা অন্য খেজাব ব্যবহারের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে এবং কালো খেজাব ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
বার্ধক্য গোপন করার জন্য বৃদ্ধের জন্য সাদা চুল-দাড়িতে কালো খেজাব ব্যবহার একেবারেই নাাজায়েজ। কালো খেজাব ব্যবহারকারী ব্যক্তি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শেষ যুগে এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা (চুল-দাড়িতে) কবুতরের বুকের রঙের মতো কালো খেজাব বা কলপ ব্যবহার করবে। তারা জানানতের সুগন্ধও পাবে না। (আবু দাউদ : ৪২১২)। যারা চুল-দাড়িতে কালো রঙ ব্যবহার করবে তারা জান্নাত থেকে তো বঞ্চিত হবে আবার তাদেরকে ভয়াবহ শাস্তির হুশিয়ারিও দিয়েছেন মহানবী (সা.)। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, কালো কলপ ব্যবহারকারী ব্যক্তির চেহারা কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কালো করে দেবেন। ’ কেমিক্যালযুক্ত যে মেহেদির রং সম্পূর্ণ কালো সেটার নাম মেহেদি হলেও তা ব্যবহার নাজায়েজ। তবে কোনো খেজাব যদি একোবরে কালো না হয়ে মিশ্র রঙের হয তা ব্যবহার করা যেতে পারে।

সুরা রূমের ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর সৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই। ’ অর্থাৎ প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহর সৃষ্ট কোনো সৃষ্টিকে পরিবর্তন সাধন করা যাবে না। সাদা কিংবা কালো চুল-দাড়িও প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি। তা পরিবর্তন হারাম। কালো রঙ দ্বারা পাকা চুল-দাড়িকে কালো করে নিজেকে যুবক কিংবা অপেক্ষাকৃত কম বয়সী জাহির করেন অনেকে। বার্ধক্যজনিত কারণে চুল-দাড়ি পেকে গেলে তা তো আশীর্বাদ। অনেকে পাকা চুল ও দাড়ি উঠিয়ে ফেলে যুবক সাজতে চান অথচ মুমিনের একটি চুল সাদা হলে একটি গুনাহ ঝড়ে যায়। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, তোমরা পাকা চুল তুলে ফেলো না। কেননা পাকা চুল হলো মুসলমানের জ্যোতি। কোনো মুসলমানের একটি চুল পেকে গেল আল্লাহ তার জন্য একটি নেকি লিখে দেন, একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন, একটি গুনাহ ক্ষমা করেন। ’ (মুসনাদে আহমাদ : ৬৯৬২)।

বার্ধক্যজনিত কারণে সাদা হয়ে যাওয়া চুল-দাড়িতে কালো খেজাব ব্যবহারে নিষেধের মূল কারণ হলো, এর দ্বারা আল্লাহপ্রদত্ত বার্ধক্যকে গোপন করে মানুষের সামনে নিজেকে তরুণ হিসেবে উপস্থাপন করা। এর ফলে ব্যক্তিগত আচরণেও প্রভাব পড়ে। এটা এক ধরণের প্রতারণা। আল্লাহর ফায়সালাকে মেনে না নেওয়ার নামান্তর। তবে অসুস্থতা, চুলের যত্ন না নেওয়া, কোনো ওষুধ ব্যবহারের কারণে বা অন্য কোনো কারণে অপরিণত বয়সেই যে যুবকের চুল-দাড়ি সাদা হয়ে গেছে যেহেতু সে আসলে বৃদ্ধ নয়, এখানে বার্ধক্য গোপন করা হচ্ছে না তাই সে কালো খেজাব ব্যবহার বৈধ বলেই অকে আলেম মত দিয়েছেন। (ফায়জুল কাদির : ১/৩৩৬)। বার্ধক্যের আগেই সাদা হয়ে যাওয়া চুলে কোনো

কোনো পূর্ববর্তী আলেমও কালো খেজাব ব্যবহার করেছেন। ইমাম জুহরি (রহ.) বলেন, আমাদের চেহারা যখন সতেজ ছিল তখন আমরা কালো খেজাব ব্যবহার করেছি। কিন্তু যখন চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ পড়েছে, চেহারা মলিন হয়ে গেছে, দাঁত নড়বড়ে হয়ে গেছে তখন আর কালো খেজাব ব্যবহার করিনি। (ফাতহুল বারি : ১০/৩৩৬)। তবে যেহেতু হাদিসে কালো খেজাবকে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে তাই যুবকদের জন্য উচিত এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করে একেবারে কালো খেজাব ব্যবহার না করে লাল কালো মিশ্রিত খেজাব ব্যবহার করা। (তুহফাতুল অহওয়াজি : ৫/১৫৪)।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here