মাগুরা প্রতিনিধি॥ মাগুরায় ধান ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ধান ক্ষেতে এ পদ্ধতিতে পোঁকা দমনের কারনে কীটনাশকের ব্যবহার কমেছে ৪০ শতাংশ। ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, জীব বৈচিত্র রক্ষাপাওয়াসহ কৃষকরাও উপকৃত হচ্ছেন ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, আবাদী জমি বিশেষ করে ধানক্ষেতের জমিতে পোঁকা দমনের জন্যে পার্চিংয়ের পদ্ধতি অত্যন্ত কর্যকর একটি পদ্ধতি। চলতি রোপা আমান মৌসুমে জেলার চার উপজেলায় ৫৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। যার মধ্যে ৪০ হাজার ৩৯০ হেক্টর ধান ক্ষেতে এখন পর্যন্ত গাছের ডাল গেড়ে ডেথ পাচিং ও ধৈঞ্চা গাছ লাগিয়ে লাইভ পার্চিং ব্যাবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯ হাজার ২০০ হেক্টরে ডেথ পার্চিং এবং ১ হাজার ১৯০ হেক্টরে লাইভ পার্চিং ব্যবহার করা হয়েছে। যা মোট চাষকৃত ধানের ৭০ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে পোঁকা দমনে শতভাগ ধান ক্ষেতে এ পদ্ধতি ব্যাবহার করা হবে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সোহরাব হোসেন জানান, আইপিএম, আইসিএম ও কৃষক স্কুল মাঠসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের ধান ক্ষেতে পার্চিং ব্যবহারের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ফলে পাচিংয়ের ব্যবহার গত ৫ থেকে ৬ বছরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ ছাড়া ধান ক্ষেতে ডেথ পার্চিং ও লাইভ পার্চিং ব্যবহারের কারনে বিভিন্ন ধরনের পাখি তার উপর বসে পোঁকা মাকড় খায়। এতে করে পোঁকা দমনে ধান ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার প্রায় ৪০ শতাংশ কমে এসেছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে ধৈঞ্চা গাছ লাগিয়ে লাইভ পার্চিং ব্যবহারের কারনে গাছের গোড়ায় নডিউল বা গুটি তৈরি হয়। যা থেকে জমিতে নাইট্রোজেন সরবরাহ হয়। এটি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি ও ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে। ধান ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার আরো কমিয়ে আনতে এবং পার্চিং এর ব্যাপকতা আরো বাড়াতে কৃষকদের ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করার কাজ অব্যাহত রয়েছে। সদর উপজেলা মঘি, আঠারোখাদা,ভাবনহাটি,শেখপাড়া সত্যপুর, বেনীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে ধানক্ষেতগুলোতে পার্চিং পদ্ধতির বালাই দমন ব্যবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি কীটনাশকের ব্যবহার কমে যাওয়ার কারনে সেখানে পাখির আনাগোনা বেড়েছে। মাগুরা সদর উপজেলার মঘি গ্রামের কৃষক ইমদাদুল হক বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ৪ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান ক্ষেতে তিনি পার্চিং ব্যবহার করেছেন। এতে বিভিন্ন ধরনের পাখি বসে পোঁকা খাওয়ায় খাচ্ছে। এতে করে প্রাকৃতিকভাবেই অনেকাংশে পোাঁকা দমন হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ধান লাগানো থেকে শুরু করে ওঠা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পোাঁক-মাকড় দমনে ফুরাডানসহ বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতেন। কিন্তু কৃষি বিভাগের পরমর্শে পার্চিং ব্যবহারের কারনে ধান ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমিয়েছেন । খুব প্রয়োজন ছাড়া তিনি কীটনাশক ব্যবহার করছেন না তিনি।
একই গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী জানান, দেড় বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান লাগিয়েছেন। পুুরো জমিতে পার্চিং ব্যবহারের কারনে ক্ষেতে অনেক বেশী পাখি আসছে। ধানের পাতায় পোঁকা অনেক কম লাগছে। ফলে কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমিয়েছেন তিনি। এছাড়া এটি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তাদের জন্য যেমন সাশ্রয়ী হচ্ছে, তেমনি স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে তারা আগের তুলনায় অনেক ভালো আছেন বলে জানান তিনি
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা জানান, আইপিএম, আইসিএম ও কৃষক স্কুল মাঠসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ধান ক্ষেতে পার্চিং ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার ফলে বিগত কয়েক বছরে ধান ক্ষেতে পার্চিং এর পদ্ধতি কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটির ব্যাপক ব্যহারের ফলে কীটনাশকের ব্যবহার অনেকাংশে কমেছে। ফলে উপকারি পোঁকা বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। যা ধানের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি জীববৈচিত্র রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে। পার্চিং পদ্ধতি ও বৃক্ষ রোপন সম্প্রসারনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে কীট নাশকের ব্যবহার আরো কমানো সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
খবর৭১/এস: