উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: আজ মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নড়াইলের পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), নড়াইল জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)সহ আনসার-ভিডিপি ও সাদা পোশাকধারীদের নেয় একটি ব্রিফিং করে আনুষ্ঠানিকতার উদ্বোধন করেন। শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসব। এরই অংশ হিসেবে এবার ৬০৭ টি পূজাম-পে দুর্গাপূজা হচ্ছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন ক্লাব ও বাসাবাড়ির পুজাম-পে সাজসাজ রব বিরাজ করছে। দুর্গাপূজা নির্বিঘ্ন ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিস্তারিত আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোর্টে, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানান, এবার পূজা উপলক্ষে জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় শারদীয় দুর্গোউৎসবকে সামনে রেখে নড়াইলে ৬০৭ টি মন্ডপে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। এখন চলছে দুর্গা মায়ের আগমনী বার্তায় ভক্তদের মাঝে লেগেছে আনন্দের দোলা। অন্যদিকে, প্রতিটি পুজা মন্ডপের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলার ছোট বড় সকল পূজা মন্ডবেই রয়েছে পুলিশের কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা। দুর্গাপূজায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম নিজেই। তিনি বলেন, শারদীয়া দুর্গাৎসব উপলক্ষে নড়াইলের প্রত্যেকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সুপারের মোবাইল নং- ০১৭১৩৩৭৪২০২, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মোবাইল নং- ০১৭১৩৩৭৪২০৩, সহকারি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এর মোবাইল নং- ০১৭১৩৩৭৪২০৪, পুলিশ কন্ট্রোল রুম এর মোবাইল নং- ০১৭১৯৪৮৫৪৩০, নড়াইল সদর থানার মোবাইল নং- ০১৭১৩৩৭৪২০৬, কালিয়া থানার মোবাইল নং- ০১৭১৩৩৭৪২০৭, লোহাগড়া থানার মোবাইল নং- ০১৭১৩৩৭৪২০৮, নড়াগাতি থানার মোবাইল নং- ০১৭১৩৩৭৪২০৯, জেলা গোয়েন্দা শাখার মোবাইল নং- ০১৭১৩৩৭৪২১০- এ ফোন করে অভিযোগ জানানোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের মতে শরৎকালে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয় বলে একে শারদীয় দুর্গোউৎসব বলে । মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ‘মহালয়া’র মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর বোধন, ২৬ সেপ্টেম্বর ষষ্টী পূজার মাধ্যমে দুর্গোৎসবের মূল পূজা শুরু হয়ে শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর । এ বছর জেলার তিনটি উপজেলায় ৬০৭ টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আইন শৃংখলা পরিবেশ স্বাভাবিক আছে। বাঙালির সার্বজনীন এ বৃহৎ উৎসবকে কেন্দ্র করে জেলার সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসব আমেজ। নড়াইলের সার্বিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় একজন ব্যতিক্রমর্ধী উদ্যোক্তার নাম পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম। নড়াইলের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া এ আপোষহীন সৈনিক জাতি, ধর্ম, বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ খুশির উৎসব দুর্গাপূজার কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য নিরাপত্তার বলয় তৈরি করেছেন পুরো নড়াইল জেলায়। নড়াইল পুলিশকে কয়েকটি ইউনিটে বিভক্ত করে এবং জেলা পূজা উদযাপন পর্ষদের সহযোগিতায় দুর্গাপূজায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধ করার লক্ষে প্রত্যেকটি পূজা মন্ডপে মোতায়েন করা হয়েছে প্রয়োজনীয় পুলিশ ফোর্স। শুধু তাই নয়, পূজামন্ডপে কেউ নাশকতা করার চেষ্টা করলে নাশকতাকারী যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তার বিরুদ্ধে সাথে সাথে এ্যাকশান নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন পুলিশ সুপার নিজেই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান (পি.পি.এম) কে প্রধান করে নড়াইলের ৪টি থানা যথাক্রমে নড়াইল থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খাঁন, কালিয়া থানার ওসি শমসের আলী, লোহগড়া থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন, নড়গাতি থানার ওসিসহ জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমানকে নিয়ে তৈরি করেছেন একটি শক্তিশালী টিম। এ টিমের মূল লক্ষ হচ্ছে পূজা মন্ডপের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা। পুলিশ জনগণের বন্ধু- এ কথাটির সত্যতা নিশ্চিতকরণের লক্ষে পুলিশ সুপারের এ বাড়তি আয়োজন। জেলার কয়েকটি পূজা মন্দির ঘুরে দেখা যায়, সেখানে পুলিশ প্রহরার জন্য বিভিন্ন আয়োজন আগে থেকেই করা হয়েছে। অর্থাৎ পূজা শুরুর সময় থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকটি মন্দিরে থাকবে পুলিশের কঠোর নজরদারি। এতে করে সকল প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্যরা। নড়াইল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জানান, পুলিশ সুপার স্যার একজন মহৎপ্রাণ মানুষ। তাঁর (পুলিশ সুপার) জন্যই নড়াইল জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যালঘু নামক শব্দটি শোনার হাত থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে। এছাড়াও পুলিশ সুপারের এ ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগের ফলে এবারের দুর্গাপূজা সফলভাবে উদযাপন করা সম্ভব হবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন। জেলার বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শনকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান (পি.পি.এম) বলেন, এবারের পূজাতে আমরা এসপি স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিচালনা করবো। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে এসপি স্যারের আদেশ মোতাবেক তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম বলেন, দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ খুশির উৎসব। আর এ উৎসবে কতিপয় নাশকতাকারীদের জন্য খুশি বিনষ্ট হবে এমনটা নড়াইল পুলিশ কখনোই মেনে নেবে না। তিনি আরও বলেন, জনগণের আনন্দ খর্ব করার অধিকার কারো নেই। আসন্ন দুর্গাপূজার কর্মকান্ড সঠিকভাবে পরিচালনার লক্ষে পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি নড়াইলবাসীকে আহ্বান জানান।
খবর৭১/জি: