ইবি প্রতিনিধি:
দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের বিরুদ্ধে। অননুমোদিত গাড়ি ব্যবহার করে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসে ১১ হাজার ২২৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে। সে হিসেবে প্রতি মাসে পাড়ি দিয়েছে প্রায় ২ হাজার কি.মি পথ। পরিবহন অফিস সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিতে পুড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৮৩৮ লিটার তেল, যার বাজার মূল্য ১ লাখ ২৩ হাজার ৬০৫ টাকা।
সকল নিতীমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারী অর্থের এমন অপব্যয় করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক এবং প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান।
এদিকে আভিযোগ আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিতিমালা আনুযায়ী প্রক্টরের জন্য কোন গাড়ী বরাদ্দ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন নিতিমালা
অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারার সার্বক্ষনিক ব্যবহারের জন্য একটি করে গাড়ি বরাদ্দ পাবেন। এছাড়া রেজিস্ট্রারকে অফিসে আনয়ন, বাসায় পৌঁছে দেয়া এবং দাপ্তরিক কাজের জন্য ১ টি গাড়ী ব্যবহার করা হবে।
তবে নীতিমালার কোথাও প্রক্টর বা প্রক্টরিয়াল বডির জন্য কোন গাড়ী বরাদ্দের কথা উল্লেখ নেই। তবে নীতিমালাটির একাংশে বলা হয়েছে ‘প্রক্টরিয়াল বডিকে জরুরী অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য একটি গাড়ী ব্যবহারের সুযোগ দেয়া যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রক্টরকে জরুরী অবস্থা জানিয়ে পরিবহন শাখা থেকে গাড়ী চাইতে হবে।’
এদিকে প্রক্টরের বিরুদ্ধে গাড়ির তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সরকারী নিয়ম লঙ্ঘনের আভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, সরকারি বিধি অনুযায়ী একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গাড়ী পেলে মাসে সর্বোচ্চ ১৮০ লিটার এর বেশি তেল ব্যবহারের অনুমোদন পান না। গাড়ি বরাদ্দ না পেয়েও প্রতি মাসে গড়ে ৩৫০ লিটার তেল পুড়িয়েছেন তিনি। বিষয়টিকে সরাসরি সরকারি নীতিমালার লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া শহরে বসবাসকারী প্রক্টর ড. মাহবুবের বাড়ি হতে ক্যাম্পাসের দূরত্ব মাত্র ২৫ কি. মি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ দপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২ হাজার ৫২ কিমি পথ পাড়ি দিয়েছে প্রক্টরের ব্যবহৃত গাড়িটি। এ পথ পাড়ি দিতে পুড়েছে ৩১১ লিটার ডিজেল।
ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৭৪৭ কি.মি, মার্চে ২ হাজার ১৪৮ কি.মি এবং এপ্রিলে ২ হাজার ৩৮৬ কি.মি, জুনে ১ হাজার ৮৪ কি.মি, মে মাসে ১ হাজার ৮০৬ কি.মি পথ পাড়ি দিতে তিনি পুড়িয়েছেন যথাক্রমে ২৯১, ৩৫৮, ৩৯৮, ৩০০ ও ১৮০ লিটার তেল। মাস ভিত্তিক পাড়ি দেয়া পথ যোগ করলে শুধুমাত্র গত ছয় মাসেই ড. মাহবুবর রহমানের ব্যবহারের গাড়িটি ১১ হাজার ২২৩ কিলোমিটার পথ চলেছে।
প্রক্টর এত পথ পাড়ি দিয়েছেন মাত্র ১৩০ দিনেই। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ক্যাম্পাসে ক্লাস হয়েছে ১০৪ দিন। গত ছয় মাসে সাপ্তাহিক ছুটি ছিল ২৬ দিন। এছাড়া প্রশাসনিক দপ্তরসহ একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল ২৮ দিন। এছাড়া শুধুমাত্র একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল ২৩ দিন। সে হিসেবে প্রক্টর কর্তৃক গাড়ি ব্যবহার হওয়ার কথা ১৩০ দিন। কিন্তু তিনি মাত্র ১৩০ দিনে নজির বিহীন ভাবে গাড়ির অপব্যবহার করেছেন।
দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিতে পুড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৮৩৮ লিটার ডিজেল। প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৬৭ টাকা ২৫ পয়সা দরে বিশ^বিদ্যালয়ের গত ছয় মাসে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬০৫ টাকার তেল পুড়িয়ে গাড়ি বিলাস করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে ইতিপূর্বে দায়িত্ব পালনকরা একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গাড়ি ব্যবহারের নামে প্রক্টর কর্তৃক এমন বিলাস ভ্রমণ নজির বিহীন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ক্যাম্পাস গত তিন বছর ধরেই একেবারেই শান্ত। এ রকম একটি পরিস্থিতিতেও গাড়ি ব্যবহারের নামে রাষ্ট্রের অর্থের এমন অপব্যয় অসততা ও দুর্নীতির মধ্যে পড়ে।”
পরিবহন অফিস ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন নীতিমালায় না থাকা শর্তেও প্রক্টরগণ গাড়ী ব্যবহার করে আসছেন। বর্তমান প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বিশ^বিদ্যালয়ের মাইক্রোবাসটি (কুষ্টিয়া-চ, ৫১-০০১১) ব্যবহার করছেন। তবে গাড়িটি মেরামতে থাকার কারনে প্রায় ২ মাস বিশ^বিদ্যালয়ের ওপর একটি প্রাইভেট কার (কুষ্টিয়া-গ ১১ ০০১৩) ব্যবহার করছেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রক্টরা ক্যাম্পাসে থেকে দায়িত্ব পালন করতেন। প্রক্টরের পদটি ক্যাম্পাসের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। সে কারনে যারাই প্রক্টরের দায়িত্ব পেতেন, তারা ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক থাকার চেষ্টা করতেন। এক্ষেত্রে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় বসবাস করতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রক্টররা ক্যাম্পাসে থাকেন নি। তারা ক্যাম্পাস থেকে ২৪ কি.মি দূরে কুষ্টিয়া বা ২২ কি.মি. দূরে ঝিনাইদহ শহরে বসবাস করতে শুরু করেন। এতে ব্যয় বাড়তে থাকে প্রক্টর কর্তৃক গাড়ি ব্যবহারের। তবে অতিতের সকল প্রক্টরের তুলনায় গাড়ি ব্যবহারের ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে বর্তমান প্রক্টর ড. মাহবুবর রহমান দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে। তিনিও কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকায় থাকেন। সেখান থেকে প্রতিদিন মাইক্রোবাসে করে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন। এছাড়া সর্বক্ষণিক তার ব্যক্তিগত কাজে গাড়িটি ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ আছে।
প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান সাংবাদিকদের বলেন,“ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন ছাড়া আমি কখনোই গাড়ি ব্যবহার করিনি। আর যদি বিধি অনুযায়ী প্রক্টর গাড়ি না পায় তবে আমি গাড়ি ব্যবহার করব না।”
এ ব্যাপারে ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, “এ বিষয়টি আমার অজানা। অবশ্যই আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।”