বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ লন্ডনে বেগম খালেদা জিয়া এখন বেটার আছেন। আজকে লন্ডনে ঈদ উদযাপন হচ্ছে। আট বছর পর ফ্যামিলির সঙ্গে উনি ঈদ উদযাপন করছেন। দিস ইজ এ গুড থিংক ফর আস।
রোববার (৩০ মার্চ) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসন কবে দেশে আসবেন এরকম প্রশ্রের জবাব বিএনপি মহাসচিব বলেন, সম্ভবত, ফাইনাল নিশ্চিত না… এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তিনি দেশে ফিরবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাডামের লিভার সিরোসিস হয়েছে জেলখানার মধ্যে। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি যে কারগারে তাকে স্লু পয়েজিং করা হয়েছে। এটা যদি ম্যাডামকে জিজ্ঞাসা করেন উনি বলবেন না। কারণ উনি সেই ধরনের মানুষ না… একবারের জন্য বলবেন না। ম্যাডামকে যে ঘরে রাখা হয়েছিলো সেই ঘরটা ছিলো স্যাঁত স্যাঁতে, সমস্ত দেয়ালের আস্তর ভেঙে ভেঙে পড়ছিল এবং ইুঁদুর দৌড়াদৌড়ি করতো… এরকম অবস্থা ফেইস করেছেন আমাদের ম্যাডাম। এর পরেও…. আমি বেশি বলতে চাই না যে, কাদম্বিনীকে মরিয়া প্রমাণ করতেই হইবে যে সে মরে নাই। এখন নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে।
একই কথা জানান লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আপনজনকে নিয়ে ঈদের দিনটি একান্তে কাটাচ্ছেন।
তিনি বলেন, লন্ডনে ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে। আপনারা জানেন, ম্যাডাম উনার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেবের বাসায় আছেন। ঈদের দিনটি উনি বাসায় আপনজনদের নিয়ে একান্তে কাটাবেন।
বাসায় দুই পুত্রবধু (ডা. জোবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান) আছেন… আছেন তিন নাতনি(ব্যারিস্টার জায়মা রহমান, জাফিয়া রহমান, জাহিয়া রহমান)। ম্যাডামকে ঘিরে ঈদের সব আয়োজন তারাই সাজিয়েছেন। কারণ দীর্ঘদিন বছর পর ম্যাডাম তার আপনজনদের সাথে ঈদ করতে যাচ্ছে। বুঝতেই পারছেন এখানে অনেক আবেগ জড়িত। বলেন তিনি।
এর আগে, গত ৮ জানুয়ারি শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য লন্ডন পৌঁছান, হিথ্ররো আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে সরাসরি তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ডেভেনশায়ার প্লেসে ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’ এ ভর্তি করা হয়।
১৭ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন এই হাসপাতালে অধ্যাপক জন প্যাট্টিক কেনেডির তত্ত্বাবধায়ননে। এরপর লন্ডন ক্লিনিকে তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রস এর তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন থাকবেন খালেদা জিয়া।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।
২০১৫ সালে লন্ডনে ঈদের পর ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন নেতা-কর্মীদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ওই অনুষ্ঠানে মায়ের পাশে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জো্বাইদা রহমানও ছিলেন।
২০১৮ সালে বিএনপির চেয়ারপারসনকে একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। করোনা সময়কালে সরকার তাকে বিশেষ কারামুক্তি দেয়। কারাবন্দি অবস্থায় চারটি ঈদে কেটেছে কারাগারে ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।