মাংসের বাজারে ঈদের প্রভাব

0
14

সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে মাংসের দাম। ঈদের কারণে বাজারে মুরগি ও গরুর মাংসের দামে প্রভাব পড়েছে। এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গরুর মাংসে ২০ থেকে ৩০ টাকা বাড়তি দাম চাচ্ছেন বিক্রেতা। খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১২০০টা বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজা এখন শেষের দিকে। কয়েকদিন পরেই ঈদ। ফলে বাজারে মাংসের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। আর চাহিদা বাড়লে দাম এমনিতেই একটু বেড়ে যায়।

সরবরাহ ঘাটতি নেই জানিয়ে যাত্রাবাড়ীর মুরগি ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, সব ধরনের মুরগির দামই বেড়ে গেছে। আগে যে দামে আমরা বিক্রি করতাম এখন সে দামে কিনতেই পারি না।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া ও আশপাশের এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদকে কেন্দ্র করে সব ধরনের মুরগির দাম বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি কক মুরগির কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। যাত্রাবাড়িতে সকালে বাজার করতে যান আসলাম হোসেন। ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, ‘এখনো ঈদ কয়েকদিন বাকি। সাধারণত ঈদের একদিন আগে বিক্রেতারা মাংসের দাম বাড়ান। এই হিসাব করে আজ বাজার করতে এসেছি। এসে দেখি মাংসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।’

খামারিদের অভিযোগ, একটি মুরগির বাচ্চা বিক্রিতে সরকারের পক্ষ থেকে ৪৯-৫৭ টাকা দাম নির্ধারণ করা থাকলেও উৎপাদক কোম্পানির কাছ থেকে আমাদের সেটি কিনতে হচ্ছে ৭০-১০০ টাকায়। একইসঙ্গে গত ২ মাস ধরে ডিমের দাম কমিয়ে রাখার ফলে অনবরত লোকসানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে পোল্ট্রি খামারিদের। যার আনুমানিক ক্ষতি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।

প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রমজানে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ডিম-মুরগির বাজার। দাম কম থাকায় স্বস্তির কথা বলা হলেও আসল পরিস্থিতি ভিন্ন।

মুদি দোকানের পণ্যের দাম আগের মতোই বাড়তি রয়েছে। তবে এখন ভোজ্যতেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। ক্রেতারা সহজেই ভোজ্যতেল কিনে স্বস্তি পাচ্ছেন।

তবে আজকের বাজারে দু-একটি মাছের দাম বাড়লেও বেশিরভাগ মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০০ টাকার আশপাশেই বিক্রি হচ্ছে পাঙ্গাশ-তেলাপিয়া, সরপুঁটিসহ বেশ কয়েক জাতের মাছ। বাজারে প্রতি কেজি বড় আকৃতির রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত, কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। কোরাল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, চাষের কই ২৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা।

এর মধ্যে দাম বেড়েছে চিংড়ি ও ইলিশ মাছের। প্রতি কেজি মাঝামাঝি আকারের চিংড়ি ৭০০-৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১৩০০ টাকায়।

কেনাকাটা করতে আসা রফিকুল হাসান বলেন, সবজি ও মুদির আইটেমগুলোর দাম বলা চলে আগের মতোই। তবে মাছ, মুরগি, গরুর দাম বেড়েছে।

বেগুন ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, পটল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, কচুর লতি ১২০ টাকা আঁটি, সাজনা ১৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে লেবুর হালি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, ধনেপাতা এক আঁটি ১০ টাকা, লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক তিন আঁটি ২০ টাকা ও পুঁইশাক ২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

বিগত সময়গুলোতে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের আগ্রাসনে কোণঠাসা থাকতো দেশি জাতের পেঁয়াজ। কখনো দামের কারণে, কখনো মান আবার কখনো সংকটকালে সরবরাহের কারণে ছড়ি ঘোরাতো ভারতের পেঁয়াজ। তবে এবার চিত্র ভিন্ন। এবার বাজার দখল করেছে দেশি পেঁয়াজ।

ভারতীয় পেঁয়াজকে টেক্কা দিয়ে গুণগত মানে অনন্য হিসেবে দেশি জাতটি এখন ক্রেতাদের নজর কেড়েছে। একইসঙ্গে দাম আর মানের কারণে সুন্দর, চকচকে হালি পেঁয়াজ জায়গা করে নিয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের আড়তগুলোতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here