সিলেটের সাত্তার আলী। তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। সর্বশেষ পাঁচ বছর পর সৌদি আরব থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর সকালে তিনি ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরে গাড়িতে ওঠার আগে তাকে চারজন মিলে জিম্মি করে বেধড়ক মারধর করে। এ সময় তার কাছে থাকা বাংলাদেশি দশ লাখ টাকা সমমূল্যের ৩০ হাজার রিয়াল ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তিনি চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।
দিগ্বিদিক কিছু বুঝতে না পেরে তিনি বিমানবন্দর থানায় যান। সেখানে তিনি জিডি করেন। জিডিতে তিনি পুরো ঘটনা উল্লেখ করেন। কিন্তু ঘটনার দু-দিন পার হলেও জড়িত ছিনতাইকারী কিংবা ছিনতাইকৃত টাকা উদ্ধার হয়নি।
ভুক্তভোগী সাত্তার আলী বলেন, কষ্টের টাকা নিয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আমি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছি। ঘরে আমার তিনটা সন্তান। আমার কষ্টের রোজগারের টাকা এভাবে দেশে ফিরতেই ছিনতাই হয়ে যাবে ভাবিনি।
প্রবাসে দুঃখ-কষ্টের রোজগারের টাকা উদ্ধারের আকুল আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বর্তমান সরকারের প্রতি আবেদন জানাই, আমার প্রবাস জীবনের কষ্টটা বুঝুন। আমার জন্য পরিবার অপেক্ষা করছে। খালি হাতে কীভাবে ঘরে ফিরব, আমার কষ্টের টাকা উদ্ধার করে দেন।
শুধু প্রবাস থেকে দেশে ফেরা সাত্তার আলী নন, খোদ দিনে-দুপরে ঢাকা শহরে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস থেকে ছিনতাইকারীরা আরও যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সর্বস্ব কেড়ে নিতে মারমুখী হয়ে উঠছে ছিনতাইকারীরা। গত পাঁচ মাসে ঢাকায় ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ গেছে ৭ জনের। গত চার মাসে ছিনতাই-অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮৬৪ ‘ছিনতাইকারী’কে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, শাহজাহানপুর, হাজারীবাগ, চকবাজার, শাহ আলী, এমনকি গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। মূলত সন্ধ্যা নামার পর ছিনতাই আতঙ্ক বাড়ছে বেপরোয়া ছিনতাই চক্রের অপতৎপরতায়। এসব ঘটনায় প্রায়শই গুরুতর আহত এমনকি প্রাণহানির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ভুক্তভোগী ও নগরবাসী প্রশ্ন তুলছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তা নিয়ে। অন্যদিকে ছিনতাই রোধে পুলিশ নানা পদক্ষেপের কথা জানালেও কার্যত ছিনতাই কমেনি।
ডিএমপি ও পুলিশের তথ্যমতে, ঢাকা শহরসহ সারা দেশে বেড়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। পুলিশের দেওয়া তথ্য শুধু মামলার পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু ছিনতাইয়ের প্রকৃত ঘটনা অনেক বেশি। যার বেশিরভাগই থানায় নথিভুক্ত হচ্ছে না। অধিকাংশ ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করছেন না, কেউ কেউ হারানো বলে জিডি করছেন। যারা শারীরিকভাবে জখম, মারধর কিংবা নিহতের মতো ঘটনা ঘটছে, কেবল সেসব ক্ষেত্রে হচ্ছে মামলা বা অভিযোগপত্র জমা পড়ছে।
গত ১৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে ছিনতাইয়ের শিকার হন রবিউল মিল্টন নামে এক যুবক। তিনি এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, অজ্ঞাতনামা ৫ জনের একটি দল আদাবর এলাকা থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। এ সময় চাপাতির চ্যাপ্টা পাশ দিয়ে আমার মাথায় দুটি, চাপাতির উল্টো পাশ দিয়ে বাম পায়ের পেছনে হাঁটুর উপরে এবং ডান হাতের কব্জিতে আঘাত করে। এলাকার ৯ নম্বর এবং ১০ নম্বর গলির মাঝামাঝি থেকে এই ছিনতাইয়ের শিকার হই। ছিনতাইকারীরা পরে ৮ নম্বর গলি থেকে আরও একজনের মোবাইল ফোন ছিনতাই করার পর কয়েকজন তাদের ধাওয়া দিলে একজনের মাথায় চাপাতি দিয়ে কোপ মেরে পালিয়ে যায়। তবে ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আমার ল্যাপটপের ব্যাগটি ফেলে রেখে যায়। ৭ নম্বর রাস্তার একটি বাড়ির কেয়ারটেকার আমার ব্যাগটি বাড়ির সামনে থেকে পেয়ে সংরক্ষণ করেন। পুলিশ আসার পর আমার ল্যাপটপ বুঝিয়ে দিয়ে থানায় নিয়ে যায় জিডি করানোর জন্য।
একই দিন হাফেজ কামরুল হাসান তার বন্ধুদের সঙ্গে সাজেক যাওয়ার জন্য রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে রওনা করেন। রাত পৌনে ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের সায়েদাবাদ এলাকায় নেমে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য ফ্লাইওভার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি ফ্লাইওভারের ওপর সাথী আবাসিক হোটেল বরাবর পৌঁছালে কয়েকজন ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে। ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ অর্থ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে চায়। বাধা দিলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছিনতাইকারী ধারালো চাকু দিয়ে তার বুকে আঘাত করে। কামরুল হাসান ফ্লাইওভারের ওপর লুটিয়ে পড়লে ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় কামরুল হাসানকে ফ্লাইওভারের ওপর পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা ধলপুরের ইসলামিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে মারা যান কামরুল। এ ঘটনায় তার বাবা ইমাম হোসেনের যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের বয়স ১৬ ও ১৭ বছর। পুলিশ জানিয়েছে, দুজনই মাদকাসক্ত। নেশার টাকা জোগাড় করতে ছিনতাই করেছিল।
এদিকে গত ১৬ ডিসেম্বর রাতের একটি ছিনতাইয়ের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, রাজধানীর আসাদ গেট এলাকায় যানজটে স্থবির সড়কে চাপাতি হাতে ঘুরছে তিন যুবক। একপর্যায়ে একটি প্রাইভেটকারের জানালা দিয়ে ছোঁ মেরে মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তারা।
পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার ৫০টি থানা এলাকায় গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২৫টি ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে। এ সময় একজন ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। তবে সুনির্দিষ্ট করে ছিনতাইজনিত কোনো জিডির তথ্য নেই পুলিশের কাছে। যদিও এই ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর সংখ্যাই বেশি। ৫ আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন সাতজন।
পুলিশ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণে এসব ঘটনা বাড়ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, এ বছরের আগস্ট মাসে পুলিশি কার্যক্রম একেবারেই ভেঙে পড়েছিল। এখনও পুলিশি কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। পুলিশকে আরও সক্রিয় ও বিট পুলিশিংকে চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে।
৪ মাসে ঢাকায় ছিনতাইয়ের ১২৫ মামলা
গত চারমাসে ঢাকায় ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে ১২৫টি। আর ডাকাতির মামলা ২২টি। গত সেপ্টেম্বরে ছিনতাই মামলা হয়েছে ১৭টি, ডাকাতি ৫, অক্টোবরে ছিনতাই ৩৩টি, ডাকাতি ৬, নভেম্বরে ছিনতাই ৩৮টি, ডাকাতি ২ এবং ডিসেম্বরে ছিনতাই মামলা ৩৭, ডাকাতির ঘটনায় দায়ের করা মামলার সংখ্যা ৯।
ছিনতাইয়ের মামলার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকায় মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, হাতিরঝিল ও শাহজাহানপুর থানায় এসব মামলা রুজু হয়।
পুলিশের ছয় বছরের পরিসংখ্যানে ছিনতাই
২০২৪ সালে ছিনতাইয়ের মামলা ছিল মোট ৮৫৯টি, ২০২৩ সালে যা ছিল ১২২৭টি। যদিও ২০২৪ সালে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ছিল।
এর আগে ২০২২ সালে ১১২৮টি, ২০২১ সালে ৯৭১, ২০২০ সালে ৯৭৮টি, ২০১৯ সালে ৮৯৬টি ছিনতাইয়ের মামলা রুজু হয়।
ছিনতাইয়ের কবলে সাংবাদিকরাও
গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ঢাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে প্রাণ রক্ষার্থে খুইয়েছেন ক্যামেরা, মোবাইল, টাকা আর ব্যাগ। হয়েছেন জখমও।
গত ১৬ ডিসেম্বর ছুটির দিন সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর মিরপুর সনি সিনেমা হলের সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মফিজুল ইসলাম সাদিক। তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, মোবাইলটি ছোঁ মেরে নিয়ে যায় ছিনতাইকারী। চিৎকার করলেও আমার কথা আশপাশের কেউ শোনেনি। থানায় জিডি করলেও মোবাইল উদ্ধার হয়নি।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আজিবুল হক পার্থও ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতের শিকার হন। গত ২২ ডিসেম্বর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডসংলগ্ন লেকের পাড়ে এ ঘটনা ঘটে।
আহত পার্থ বলেন, আমি সকালবেলা অফিসের দিকে যাচ্ছিলাম। পথে তিনজন যুবক সম্ভবত ছিনতাই করে ফিরছিল। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারা সরাসরি এসে আমাকে হামলা করে। তাদের একজন আমার হাতে ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। তাদের ধারণা ছিল আমি ছিনতাই দেখে ফেলেছি। এর কয়েক মিনিট পর বুঝতে পারি হাতে রক্ত ঝরছে। পাশে একজন লোক ছুটে এসে আমার ব্যাগে থাকা লুঙ্গি দিয়ে হাত বেঁধে দেয়। এরপর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছেন খোদ রিপোর্টারদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে কর্মস্থল দৈনিক ইনকিলাব থেকে ফেরার পথে মতিঝিলে এ ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, তারা মোবাইল ফোন টার্গেট করে আমার ওপর হামলা করে এবং মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এ সময় হাত ও পায়ে জখম হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছি।
গত ৩ ডিসেম্বর স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল বৈশাখীর সিনিয়র রিপোর্টার ও অপরাধবিষয়ক অনুষ্ঠান নির্মাতা জে ইউ জুবায়ের ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। ছিনতাইকারীরা চাপাতি ও পিস্তল ঠেকিয়ে সঙ্গে থাকা নগদ অর্থসহ তার মানিব্যাগ ও মুঠোফোন নিয়ে যায়। চাপাতির কোপে পায়ে আঘাত পেয়েছেন তিনি। রামপুরা টেলিভিশন ভবনের পেছনে বনশ্রী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জে ইউ জুবায়ের জানান, বইমেলার জন্য একটি পাণ্ডুলিপির কাজ শেষ করে লেখক মোবারক হোসেনসহ তিনি অটোরিকশায় গুলশান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। বনশ্রী ঢোকার পথে রামপুরা টিভি ভবনের পাশের গলিতে পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেল হঠাৎ করেই তাদের রিকশার গতিরোধ করে। মোটরসাইকেলে তিনজন আরোহী ছিল। মাথায় ছিল হেলমেট, মুখে ছিল মাস্ক। একজনের হাতে ছিল চাপাতি, অন্যজনের হাতে ছিল পিস্তল। অস্ত্রের মুখে ছিনতাইকারীরা তাদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন, আইডি কার্ডসহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
জুবায়ের বলেন, সবকিছু লুটে নেওয়ার পরও তারা আমাদের চাপাতি দিয়ে কোপানোর চেষ্টা করে। বিপরীত দিক থেকে একটি পিকআপ চলে আসায় দ্রুত মোটরসাইকেলে উঠে তারা পালিয়ে যায়।
গত ১৩ নভেম্বর রাত ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে মোহাম্মদপুরের বসিলা রোডের তিন রাস্তার মোড়ে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ফটো সাংবাদিক মো. নাঈমুর রহমান ছিনতাইয়ের শিকার হন। এ সময় তার কাছে থাকা নগদ ৭ হাজার টাকা, ব্যাটারি এবং সনির মেমোরিকার্ডসহ একটি নিকন ডি-৮৫০ ক্যামেরা, একটি নিকন ২৪-১২০ এমএম ক্যামেরার লেন্স, একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে ১৬ নভেম্বর অভিযান চালিয়ে তিনজন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছিনতাই হওয়া ক্যামেরাও উদ্ধার করা হয়।
ডিসেম্বরে রেকর্ড ৫৬৪ জনকে গ্রেপ্তার
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, ছিনতাইয়ের অভিযোগ ও থানায় দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ৮৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে ২৩ জন, অক্টোবরে ৯১, নভেম্বরে ১৪৮ ও সর্বশেষ ডিসেম্বরে রেকর্ড ৫৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএমপির এই পরিসংখ্যানই বলছে পুলিশ কতটা তৎপর হয়েছে। সার্বক্ষণিক ডিউটিতে থাকছেন পুলিশ সদস্যরা। ঝুঁকিপূর্ণ, জনবহুল ও ছিনতাইপ্রবণ এলাকায় ডিবিপুলিশ কাজ করছে। আবাসিক এলাকার অলিগলিতে টহলে থাকছে থানাপুলিশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম নাজমুস সাকিব বলেন, ৫ আগস্টের বড় প্রভাব পুলিশের ওপরে পড়েছে। ভেঙে পড়া মনোবল ও চেইন অব কমান্ড এখনো শক্ত হয়নি। আর বড় সমস্যা পুলিশের গণহারে ঘন ঘন পোস্টিং। এতে করে সোর্সনির্ভর পুলিশিংয়ে বড় সমস্যা হয়।
তিনি বলেন, মামলা-মোকদ্দমার হয়রানির ভয় থেকে ভুক্তভোগী অনেকেই পুলিশ কেস বা মামলায় জড়াতে চান না। ফলে যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে জামিন পেয়ে আবারও ছিনতাই কাজে জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাইকারীরা। শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় ছিনতাইকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে। আবার গ্রেপ্তার হলেও জামিন পেয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীতে ছিনতাই রোধে শেষ রাতে পুলিশি টহল বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শেষ রাতে সাধারণত ছিনতাই হয়, সেজন্য শেষ রাতে যেন টহলটা বাড়িয়ে দেওয়া যায় সেই চেষ্টা করছি।
র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, অপরাধ রোধে প্রত্যেকটি ব্যাটালিয়নকে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার অপরাধপ্রবণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা, বিশেষ করে রাতে টহল কার্যক্রম ও চেকপোস্ট জোরদার করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ছিনতাই মামলার আসামি গ্রেপ্তারের পর বের হয়ে নতুন করে আবারও ছিনতাই অপরাধে জড়াচ্ছে কিনা তা গোয়েন্দা অনুসন্ধানে দেখা হচ্ছে।
জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস, এন, মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকার ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করতে থানাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু ছিনতাইপ্রবণ এলাকা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রাতে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিএমপির কন্ট্রোল রুম থেকে ওয়ারলেসে পেট্রোলগুলোর লোকেশন নেওয়া হচ্ছে এবং তারা সজাগ আছে কি না সেটিও তদারকি করা হচ্ছে।