জায়ামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে ১৪ দল একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সোমবার (২৯ জুলাই) ১৪ দলের বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্যের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। জাতীয় স্বার্থে দেশবিরোধী অপশক্তি নির্মূল করার জন্য ১৪ দলের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সেতুমন্ত্রী জানান, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সরকার দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।’
১৪ দলের আরেক শরিক বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হলে তারা আর সংবাদ সম্মেলন কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে পারবে না।’
এর আগে সূচনা বক্তব্যে সাম্প্রতিক আন্দোলনে নাশকতার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে ওই শিবির, ছাত্রদল, বিএনপি-জামায়াত এরাই কিন্তু এবং জঙ্গি এরা। এই জঙ্গিরাই কিন্তু আজকে আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, আসলে এটা কোনো রাজনৈতিক কিছু না। এটা সম্পূর্ণ জঙ্গিবাদী কাজ। একেবারে জঙ্গিবাদী কাজ।’
কোটা কোনো ইস্যু নয় দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এদের উদ্দেশ্যটা এখন বোঝা যাচ্ছে যে, কোটা কোনো ইস্যু না। একে একে যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সেবা দেয়, যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করে, সেটাই ধ্বংস করা। অর্থাৎ বাংলাদেশটাকেই যেন ধ্বংস করে ফেলা।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনে নির্বাচন কমিশন। সে সময় ৩৮টি দলের সঙ্গে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী জামায়াতে ইসলামীও নিবন্ধিত হয়। আইন অনুযায়ী শুধু নিবন্ধিত দলগুলোই নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়।
জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তরীকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে একটি রিট আবেদন করেন। চার কারণে জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে পারে না বলে রিট আবেদনে বলা হয়।
ওই রিটের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট একটি রুল জারি করে। রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১)(বি)(২) ও ৯০(সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে। এরই মধ্যে নিবন্ধন বাঁচাতে দলীয় গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে জামায়াত।
রুলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের বেঞ্চ রায় দেয়। সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয় ওই রায়ে। ফলে বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতের নির্বাচন করার পথ বন্ধ হয়ে যায়।
ওই রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন ওই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। পরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর সেটিও খারিজ হয়ে যায়।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। তার আগেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৭ সালের মার্চে জামায়াতের জন্য বরাদ্দ মার্কা দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট জারি করে নির্বাচন কমিশন।
আদালতে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় জামায়াত দশম এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়নি। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনেও দলীয়ভাবে অংশ নিতে পারেননি দলটি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতারা বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।