কোটা আন্দোলন: সংঘর্ষে প্রাণ গেল ৫ জনের

0
42

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবির আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশ। আন্দোলন করতে গিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এবং পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন কয়েকশ।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজন প্রাণ হারান। রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মারা গেছেন। আর ঢাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে মারা গেছেন একজন হকার।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন গতকাল সোমবার (১৫ জুলাই) সহিংস রূপ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে তিন শতাধিক আহত হন।

আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সারাদেশে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর অংশ হিসেবে আজ সকাল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানেও সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। কোটাবিরোধী আন্দোলনে আজই প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত ৩

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা সোয়া তিনটার দিকে নগরীর মুরাদপুরে এই ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন তিনজনের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় আরও সাতজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানান পরিচালক।

নিহত দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম এবং ওয়ার্কশপ কর্মচারী ফারুক। ওয়াসিমের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় আর ফারুকের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। বাকি একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৩টা থেকে নগরীর মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট এবং ষোলশহরসহ আশেপাশের এলাকায় কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর আগে দুপুর থেকে বিভিন্ন মোড়ে অবস্থা নেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। দুই নম্বর গেট এলাকায় একটি বাস ভাঙচুর করে তারা। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। কোটা আন্দোলনকারীরাও লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন।

রংপুরে সংঘর্ষে বেরোবি শিক্ষার্থী নিহত

রংপুরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আবু সাঈদ নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলনকারীসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ ব্যাচের ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের জাফর পাড়ায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোটা সংস্কার ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে দুপুরে বেরোবির কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকায় থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যায়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। এসময় পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here