বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চলা কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে আজকের মতো শাহবাগ মোড় ত্যাগ করেন।
শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে শাহবাগে এসে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় এক ঘণ্টা তারা রাজধানীর এই গুরুত্বপূর্ণ মোড়টি অবরোধ করে রাখেন। এতে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তারা জানান আগামীকাল শনিবার (১৩ জুলাই) দেশের সব জেলা এবং ক্যাম্পাসের প্রতিনিধিদের সাথে জনসংযোগ করা হবে। একই সঙ্গে পূর্বে ঘোষিত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচিও চলমান থাকবে। বিকেল ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে প্রেস ব্রিফিং হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘যারা কখনোই চাকরি করবে না, তারা প্রশ্ন তুলছে আমাদের আন্দোলন নিয়ে। যতগুলো প্রতিষ্ঠানে রক্ত ঝরছে তার তীব্র নিন্দা আমরা জানাই। যেখানেই হামলা হবে আমরা দাঁতভাঙা জবাব দেব। আমাদের হারানোর কিছু নেই। আমাদের একমাত্র চাওয়া একটি মেধা।
আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমরা এসেছিলাম দেশের হাল ধরতে। আমাদের এক দফা মেনে নিন। আমাদের পড়ার টেবিলে ফেরত যেতে দিন৷’
আরেক সমন্বয়ক আবু বকর মজুমদার বলেন, ‘গতকাল বিভিন্ন ক্যাম্পাস এবং জেলায় যাদের পুলিশ নির্যাতন করেছে তার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি আজকের শাহবাগ অবরোধ থেকে। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি হলো আগামীকাল দেশের সকল জেলা এবং ক্যাম্পাসের প্রতিনিধিদের সাথে জনসংযোগ ও ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে প্রেস ব্রিফিং হবে।’
এর আগে দুপুরে পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি ক্যাম্পাসের নানা অংশে প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা শাহবাগে সমাবেশের জন্য জড়ো হয়।
‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার বোন আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘লাঠিশোঁটা টিয়ার গ্যাস, রুখে দেওয়া যাবে না, ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না মানবো না’, ‘কোটা বাতিল করো বাতিল করো’, ‘ছাত্রসমাজ গড়বে দেশ, হামলা করে বন্ধ করা যাবে না’, ‘মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ করতে হবে করতে হবে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি নানা স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
২০১৮ সালের অক্টোবরে কোটাবিরোধী আন্দোলন চরম আকার ধারণ করলে সরকার পরিপত্র জারি করে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দেয়। ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুন পরিপত্রটি বাতিল করে দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
এই রায়ের পর ফুঁসে উঠেন শিক্ষার্থীরা। তারা কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। গত ১ জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে জোরালো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।