ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে বিভিন্ন ব্যাচ থেকে ক্যাডার (প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা) হওয়া অনেকের নাম বেরিয়ে আসছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অভিযানে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের গ্রেপ্তার সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব নাম পাওয়া যাচ্ছে। আপাতত ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডার হওয়াদের নামের তালিকা তৈরি ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।
এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাইছেন না তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তবে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) অধীনে নেওয়া বিসিএস পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যারা ক্যাডার হয়েছেন, তাদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কাউকে কাউকে রাখা হয়েছে নজরদারিতেও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিমেল চাকমা বলেন, ‘এখনই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার কয়েকটি ব্যাচের এমন অনেকে আছেন, যারা এই চক্রের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের উত্তর পেয়ে ক্যাডার হয়েছেন। চক্রটির গ্রেপ্তার হওয়া সদস্যদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এখন সরকারি প্রায় সব পর্যায়ে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা বিরাজ করার নেপথ্যে রয়েছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের মাধ্যমে বিসিএস ক্যাডার হওয়া। তারা চাকরিতে প্রবেশ করেছে দুর্নীতির মাধ্যমে। শুরুটা যেহেতু দুর্নীতির মাধ্যমে, এ কারণে তারা যেখানে দায়িত্ব পালন করে, সব জায়গায় দুর্নীতি করতেই থাকে।
মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা পর্যন্ত দুর্নীতিবাজদের চেইন অব কমান্ড আছে। এই কারণে দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে, জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে। অধিকাংশ প্রশাসনে টাকা ছাড়া কাজ না হওয়ার অন্যতম কারণ এটি।
প্রসঙ্গত, বিসিএস প্রিলিমিনারি, লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত এই চক্র। খোদ পিএসসির একাধিক কর্মকর্তা এসব প্রশ্ন ফাঁস করে আসছেন দীর্ঘ সময় ধরে। গত ৬ থেকে ৮ জুলাই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রে জড়িত সন্দেহে ১৭ জনকে আটক করে সিআইডি। আটকের পর গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন থানায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে মামলা করা হয় সিআইডির পক্ষ থেকে। এতে ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয়সহ ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতে তোলা হয় গতকাল। যাদের ১০ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন সাতজন। পলাতক আছেন ১৪ জন আসামি। ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করা হয়েছে গ্রেপ্তার ১৭ জনের ব্যাংক হিসাব।