ভোগ্যপণ্যের আমদানিতেও ধস নেমেছে

0
40

ডলার সংকটে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি। ডলার খরায় ঋণপত্র (এলসি) খোলা এবং নিষ্পত্তি মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে না পারায় ভোগ্যপণ্যের আমদানিতেও ধস নেমেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলার হার কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। আর নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে হ্রাস পেয়েছে ২০ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল ৬১৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের, যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এসে দাঁড়িয়েছে ৫২৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে এলসি খোলা কমেছে ৯০ কোটি ৫ লাখ ডলারের। অর্থাৎ এলসি খোলা কমার হার শতকরা কমেছে ১৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছিল ৬০৩ কোটি ২৩ লাখ ডলারের। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ভোগ্যপণ্যের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৮২ কোটি ১৮ লাখ ডলারের। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ১২১ কোটি ৫ লাখ ডলারের এলসি কম নিষ্পত্তি হয়েছে। শতকরা হিসাবে এলসি নিষ্পত্তির হার হ্রাস পেয়েছে ২০ দশমিক ০৭ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল ১ হাজার ৭৯১ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে শিল্পের কাঁচামালের এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ৭৬৬ কোটি ১২ লাখ ডলারের। সেই হিসাবে ২৫ কোটি ২৬ লাখ ডলারের এলসি কম খোলা হয়েছে। একইভাবে গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ২ হাজার ৮২কোটি ১৪ লাখ ডলারের। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৬২৭ কোটি ২৯ লাখ ডলারের। সেই হিসাবে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ৪৫৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের এলসি কম নিষ্পত্তি হয়েছে।

অপরদিকে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল ২৩৮ কোটি ১৮ লাখ ডলারের। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে খোলা হয়েছে ১৯৩ কোটি শূন্য দশমিক ৪ লাখ ডলারের। সেই হিসাবে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলা কমেছে ৪৫ কোটি ১৪ লাখ ডলারের। আর মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ২৮২ কোটি ৯৯ লাখ ডলারের। আর চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ২১২ কোটি ২৮ লাখ ডলারের। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলা কমেছে ১৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ ও এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ২৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় আমদানিকারকরা পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। অন্যদিকে, সাধারণ ভুক্তভোগীরা বলছেন, ডলারের দামের অজুহাতে ইচ্ছামত পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেছে ব্যবসায়ীরা।

তবে সরকার দাবি করছে, ডলারের সংকট থাকলেও পণ্য আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। এমনকি নিত্যপণের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয়েছে, যার কারণে রিজার্ভ তলানিতে নেমেছে।

এ বিষয়ে চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রইসের কর্ণধার ইলিয়াস উদ্দিন বলেন, ডলার সংকটের চাপ সামলাতে বিলাসীপণ্যের ওপর কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করা হলেও তা একটা পর্যায়ে নিত্যপণের ওপরেও পড়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় আমদানিকারকরা পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে ডলার সরবরাহ করে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। তবে এত দামে ডলার কিনে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা সত্ত্বেও আমদানির জন্য এলসি খোলা এবং নিষ্পত্তি দুটোই কমেছে। এতে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ফলে সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি দামের প্রভাব পড়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here