বেশ সংকটে পড়েছেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। মূলধনি মুনাফায় করারোপের ঘোষণায় তারা ধাক্কা খেয়েছেন। গত এক মাসের বেশি সময় এ কারণে লাগাতার দর পতন হচ্ছে। এর মধ্যে এখন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মুখে সার্বিক অর্থনীতির করুণ দশার চিত্র স্পষ্ট হওয়ায় বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় ধরেছে তাদের মনে। লাভের চিন্তা বাদ দিয়ে এখনই বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার পথ খুঁজছেন অনেকে। ফলে ক্রেতার তুলনায় দিনে দিনে বিক্রেতার সংখ্যা বড় হচ্ছে। এতে দর পতনও বাড়ছে।
গতকাল সোমবারও ঢাকার শেয়ারবাজারের দর পতন হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ বাজারের মূল প্ল্যাটফর্মে কেনাবেচা হওয়া তালিকাভুক্ত ৩৯৬ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে লেনদেনের মাঝে ২৮৬টিই ক্রেতাশূন্য বা দিনের সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে নামে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ২০৬।
দিনের লেনদেন শেষে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মাত্র ২৫ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। বিপরীতে ৩৪০টির দর কমেছে, যা মোটের প্রায় ৮৬ শতাংশ। বাকি ২১টির দর অপরিবর্তিত ছিল। এমন দর পতনে ঢাকার বাজারের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৫ পয়েন্ট হারিয়ে নেমেছে ৫১০৫ পয়েন্টে। এর ফলে সূচকটি ফিরে গেছে ২০২১ সালের ২ এপ্রিল বা তিন বছরের বেশি সময়ের আগের অবস্থানে। শুধু শেয়ারদর বা সূচক নয়, টাকার অঙ্কে শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণও কমছে। গতকাল ঢাকার এ বাজারে কেনাবেচা হয়েছে ৩১৮ কোটি টাকার, যা রোববারের তুলনায় ৩৯ কোটি টাকা কম এবং একক দিনের হিসাবে চলতি বছরে তৃতীয় সর্বনিম্ন লেনদেন। খাতওয়ারি লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, সিমেন্ট, সিরামিক, তথ্য-প্রযুক্তি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, সেবা ও নির্মাণ, পাট, কাগজ ও ছাপাখানা এবং টেলিযোগাযোগ খাতের তালিকাভুক্ত ৯৩ কোম্পানির একটিরও দর বাড়েনি। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা, প্রকৌশল, বস্ত্র, তথ্য-প্রযুক্তি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, সেবা ও নির্মাণ, কাগজ ও ছাপাখানা খাতের শেয়ারগুলোর গড় দর ২ থেকে প্রায় ৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, তারা নিজেরাই বড় লোকসানের মুখে। শেয়ার কেনাবেচা কমায় কর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছেন। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় বিনিয়োগকারীদের নতুন করে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেওয়ারও সাহস করছেন না। এদিকে নিজের অর্থের সুরক্ষায় শেয়ার কিনতে বিনিয়োগকারীদের যে মার্জিন ঋণ দিয়েছিলেন, দর পতনের কারণে আইন অনুযায়ী তা ফোর্সসেল পর্যায়ে গেলেই শেয়ার বিক্রি করে তা সমন্বয় করছেন। অর্থাৎ ঋণের পরিমাণ কমিয়ে নিচ্ছেন। এতেও শেয়ার বিক্রি বাড়ছে। এর মধ্যে বড় বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ হজে যাওয়ায় শেয়ারে বিনিয়োগ কমেছে বলে জানান ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা।