রিজার্ভ বাড়াতে, মূল্যস্ফীতি কমাতে সময় লাগবে: অর্থমন্ত্রী

0
65

মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যমূল্যের ওপর বাড়তি চাপ মোকাবিলা এবং ডলারসংকটে চাপে পড়া রিজার্ভ বাড়ানো প্রস্তাবিত বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হলেও শিগগির তা অর্জনের সম্ভাবনা নেই। এটি অর্জনে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

আজ শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজেট ‘তুলনামূলক কম বৃদ্ধি’ পেয়েছে। এর আগে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে; সুদের হার বৃদ্ধি করা হয়েছে। যখন দরকার পণ্য আমদানি করা হয়েছে। বাজার পর্যবেক্ষণ চলমান রয়েছে। বিশেষ খাদ্য মূলস্ফীতি কমাতে অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এসবের ফল আসতে সময় লাগে।

তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার। সাধারণ মানুষের কষ্ট যাতে না বাড়ে সে জন্য স্বল্পমূল্যে পণ্য সরবরাহের লক্ষ্যে ন্যাশনাল কার্ডের বাইরেও খোলাবাজার, ডিলার ও টিসিবি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। আমরা আশা করছি, এ বছরের শেষের দিকে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। দেখা যাক, চেষ্টা তো করতে হবে। এটা তো সরলীকরণ করলে চলবে না। এ ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক সব বিষয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি এখনো ৯ শতাংশের ঘরে রয়েছে। বৈশ্বিক কারণে মুদ্রার ওপর চাপ বাড়ায় টাকার মান কমেছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ার জন্য এটা কারণ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, নিয়েছি। আরও যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, আমরা নেব। আশা করি, বছর শেষে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।’

ব্যাংকে তারল্য সংকটের সময় বাজেটে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা ব্যাংকে তারল্য সংকট সৃষ্টি করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া নতুন কিছু না। এটা সব বাজেটেই সব অর্থমন্ত্রীরা করে থাকেন। সব সরকার করে থাকে। উন্নত দেশগুলো তো বাজেটের ঘাটতি মেটাতে আরও অনেক বেশি অর্থ নিয়ে থাকে। আমরা তো মাত্র ৫ শতাংশের মধ্যে এটা ধরে রেখেছি। কাজেই এটা এত গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়।’

৬ জুন জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ। আর ২০২৫ সালের জন্য গ্রস রিজার্ভ প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩২ বিলিয়ন ডলার। ৫ জুন রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ২৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। যদিও ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার।

রিজার্ভ বৃদ্ধিসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ডলারসংকটে রিজার্ভের কমেছে। এ জন্য রিজার্ভ বৃদ্ধির বিষয়ে বাজেটে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু ১৮ বিলিয়নের ঘরের রিজার্ভ এক বছরে ৩২ বিলিযন ডলার হবে, তার কোনো জবাব তিনি দেননি।

তবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকার আয়শা খান বলেছেন, শুধু ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের দাম বাড়িয়ে রিজার্ভ বাড়ানো হবে, বিষয়টি তেমন না। ইতিমধ্যে অনিবাসী, বিদেশিরা অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খুলে বৈদেশিক মুদ্রা রাখার সুযোগ পাবেন। এ নিয়ে সম্প্রতি আইন পাস করা হয়েছে।

সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ে বাজেটে কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সুনীল অর্থনীতির গবেষণায় ও অন্যান্য বিষয়ের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। রমজান মাসের পর থেকে এখনো তেল-চিনির দাম ভারসাম্য অবস্থায় আছে। ধান-চাল আমদানিতে কর দুই-এক শতাংশ করা হয়েছে বাজেটে।

দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন এক কোটি নাগরিক ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য পাচ্ছেন। আসন্ন বাজেটের মেয়াদে ন্যায্যমূল্যে পণ্য দিতে স্থায়ী দোকানের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য দেওয়ার কাজ চলছে। এটা হলে আরও বেশিসংখ্যক মানুষ এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া নৈমিত্তিক কাজ। ব্যাংকে টাকা রাখলে তো সুদ বাড়ে। ব্যাংক এসব সুদ কীভাবে দেবে? এ জন্য ব্যাংক টাকা বিনিয়োগ করছে। এই পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী চলমান। ব্যাংকের ব্যবসা বন্ধ না করে চালু রাখতে হবে। আর ঋণখেলাপি একদিনের নয়, দীর্ঘদিনের। সরকারের অন্যতম টার্গেট খেলাপি ঋণ কমানো।’

এমপিদের বিনা শুল্কে গাড়ি কেন দেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা নই, এরশাদ সাহেব চালু করেছিলেন। একটা বিষয় চালু হলে সেটা বন্ধ করা কঠিন।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here