সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যয়ের আওতায় এলে চরম বৈষম্যের শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ স্কিম বাতিল না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন শিক্ষকরা এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম-প্রত্যয়ের মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত ও নতুন যোগদান করা শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার হবেন এবং মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে নিরুৎসাহিত হবেন-এ কথা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের এ স্কিমের বাইরে রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার (২০ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্লাবে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া। সম্মেলনে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আগামী ২৫ মে তারিখের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো ধরনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে ২৬ মে সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকরা একযোগে সকাল সাড়ে ১১টাা থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন ও পরীক্ষাসমূহ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে, আগামী ২৮ মে সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালসমূহের শিক্ষকরা একযোগে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবেন ও পরীক্ষাসমূহ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে।
এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানা হলে আগামী ৪ জুন মঙ্গলবার সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালসমূহের শিক্ষকরা একযোগে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। পরীক্ষাসমূহ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। এসময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে বড় আন্দোলনে যাওয়ার কথাও বলা হয়।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক নিজামুল আরও বলেন, এ ব্যবস্থা ১ জুলাইয়ের আগে যোগদানকৃত এবং তারপরে যোগদানকৃতদের মধ্যে দুটি শ্রেণির জন্ম দেবে। একই কর্মক্ষেত্রে অবস্থানরত সহকর্মীদের মধ্যে এ বিভাজন শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক পড়বে। প্রতিটি ধাপেই নতুন নিয়োগ হয়। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অন্য প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করলে সেটিও নতুন নিয়োগের ভিত্তিতে হয়। এই ব্যবস্থা সরকারি অন্যান্য চাকরিজীবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য তৈরি করবে, যা সংবিধানের সমতার নীতির পরিপন্থি। বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশন বাবদ কোনো অর্থ কর্তন করা হয় না। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা ৫০০০ টাকা (যেটি সর্বনিম্ন) হারে টাকা কর্তন করার বিধান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্য হন। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে আনুতোষিক শূন্য। বিদ্যমান পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হন। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে পেনশনারের মৃত্যু হলে নমিনি পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্তি হওয়া পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্ত হবেন। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় পেনশনের ওপর বৎসরিক ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হয়। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বিষয়টি সুস্পষ্ট নয়। বিদ্যমান ব্যবস্থায় অর্জিত ছুটি নগদায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রস্তাবিত স্কিমে সে সুবিধা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদকাল ৬৫ বছর। প্রত্যয় স্কিমে অবসরকালীন বয়স স্থির করা হয়েছে ৬০ বছর।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালে ৮ম জাতীয় বেতন স্কেলে শিক্ষকদের অবনমন করা হয়েছিল। ওইসময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিষয়টির সুরাহা হয়। সেই আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের তৎকালীন নেতৃবৃন্দকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুপারগ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছিল। অদ্যাবধি সে বিষয়টি কার্যকর করা হয়নি। সেটি অবিলম্বে কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রদানের দাবি দীর্ঘদিনের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশা মেধাবীদের কাছে আকর্ষণীয় করতে পেশাগত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রবর্তনের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ‘এ ধরনের বৈষম্যমূলক একটি প্রত্যয় স্কিম কেমন করে, কোথা থেকে এল, এটির কারণ এবং এটি যে বৈষম্যমূলক এটা নিশ্চই আপনারা সকলে অনুধাবন করেছেন।’
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘২৫ বছর পর যখন ফুল পেনশনে আমরা যাব, তখন দেখা যাবে আমাদের যে কলিগরা অন্যান্য পেশা থেকে আমাদেরকে বের করে দিয়েছেন এখানে, অর্থনৈতিকভাবে আমরা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
শিক্ষকদের দাবি, নতুন পেনশন স্কিমে সরকারি অন্যান্য চাকরিজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য তৈরি করবে। সেই সঙ্গে কমে যাবে অবসরকালীন সুবিধা।
কোনো আলোচনা না করেই সার্বজনীন পেনশন স্কিম চাপিয়ে দেওয়াটা অনৈতিক বলেও মনে করছেন শিক্ষকরা।