গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদের সবর নিউইয়র্ক শহরের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন ঠেকাতে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিলটন হলে অভিযান চালিয়ে ১০০ অধিক বিক্ষোভকারীকে আটকের ঘটনায় বিপর্যস্ত পুরো ক্যাম্পাস। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সব প্রবেশ পথেই পুলিশ ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মী ও রাস্তায় ব্যারিকেড রয়েছে। এদিকে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের তাঁবুতে হামলা চালিয়েছে মুখোশ পরিহিত ইসরাইলপন্থিরা। এ অবস্থায় বিক্ষোভকারীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। খবর বিবিসি ও ডয়েচে ভেলে।
এ পরিস্থিতিতে জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস বাতিল করা হয়েছে, আর পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার গাজার ঘটনার প্রতিবাদ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিলটন হলে অভিযান চালিয়ে ১০০ অধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাস বিপর্যস্ত।
পুলিশের চালানো অভিযান নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নেমাত শফিক। এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘গভীর দুঃখ নিয়েই শিক্ষার্থী ও অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ক্ষত শুকাতে সময় লাগবে।’
এদিকে লস এঞ্জেলসে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর। পুলিশকে ডাকার আগেই এই ক্যাম্পাসে মুখোশ পরিহিত ইসরায়েলপন্থি একটি গ্রুপ ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের তাঁবুতে হামলা চালিয়েছে।
গভর্নরের মুখপাত্র জানান, এ ঘটনায় পুলিশের দেরিতে আসা ও সীমিত হস্তক্ষেপ মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
গত বুধবার ওই ক্যাম্পাসে শত শত পুলিশ কর্মকর্তা অবস্থান নেয়। তবে অনেকেই অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের তাঁবুকে ঘিরে সংঘর্ষের সময় পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও কর্মকর্তাদের দাবি, সহিংসতা শুরু পর দ্রুত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
এ ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘গণতন্ত্রে বিরোধিতা থাকবে। কিন্তু বিরোধিতা মানে সহিংসতা নয়। বিরোধিতা যেন বিশৃঙ্খলার দিকে না যায়। আমরা স্বৈরাচারী দেশ না, যেখানে আমরা যাবতীয় বিরোধকে চুপ করিয়ে দেব। আমরা এমন দেশ নয়, যেখানে আইনের শাসন চলে না। আমরা সভ্য দেশ, যেখানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিবিদ্বেষের কোনো জায়গা নেই। ইহুদি পড়ুয়াদের ভয় দেখানো যাবে না, তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার হুমকি দেওয়া যাবে না। কোনো হিংসাত্বক কথা বরদাস্ত করা হবে না। ইহুদিবিদ্বেষ, ইসলামোফোবিয়া, আরব আমেরিকান ও ফিলিস্তিনি আমেরিকানদের মধ্যে কোনো রকম অন্যায় সহ্য করা হবে না।’
প্রসঙ্গত, গাজায় ইসরাইলের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪ হাজার ৪৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৭৭ হাজার ৫৭৫ জন। গত ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা আশ্চর্যজনকভাবে ইসরাইলে হামলা চালায়। এতে করে অন্তত ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হয়। এছাড়া ২৫৩ জনকে জিম্মি করে। এরপরই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইল। তবে এই হামলায় নিরীহ ফিলিস্তিনিরাই নিহত হচ্ছেন।
এ ঘটনায় ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যক্তি ও কোম্পানিকে বয়কটের দাবিতে গত কিছুদিন ধরেই প্রচণ্ড ছাত্র বিক্ষোভ চলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। গত মঙ্গলবার রাতে কয়েকটি জায়গায় তা সংঘর্ষের রূপ নেয়।