৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না দেয়ায় আরও ৬১ নেতাকে দলের সব ধরনের পদ থেকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাচনের দুই ধাপে অংশ নেয়া ১৪১ নেতাকে বহিষ্কার করল দলটি।
শনিবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে নতুন করে ৬১ নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়ে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় গঠনতন্ত্র মোতাবেক বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে ২৬ জন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী। বাকি ৩৫ জনের মধ্যে ১৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং ১৬ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিতব্য ২য় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির যেসব নেতা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় বৃহস্পতিবার (২ মে) তাদের কারণ দর্শানো (শোকজ) নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। পত্রপ্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নোটিশের লিখিত জবাব দিতে বলা হয়।
এর আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে অংশ নেয়ার শুরুতে ৭৩ জনসহ সবমিলিয়ে ৮০ জনকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী এবার কমবেশি ৪৮০ উপজেলা পরিষদে চার ধাপে ভোট হবে। প্রথম ধাপে ভোট হবে ৮ মে। এরপর ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে, ২৯ মে তৃতীয় ও ৫ জুন চতুর্থ ধাপের নির্বাচন হবে। ইতোমধ্যে সব ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপেও বিএনপি নেতাদের অনেকে প্রার্থী হতে আগ্রহী। ফলে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের অবস্থানে থাকা দলটির বহিষ্কারের সংখ্যা দীর্ঘ হবে। নেতাদের ধারণা, উপজেলা নির্বাচনের শেষ ধাপ পর্যন্ত বহিষ্কারের সংখ্যা আড়াইশ-তিনশ হতে পারে। যদিও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কারণে কিছু নেতা বহিষ্কার হলেও তাতে তাদের দলের কোনো ক্ষতি হবে না।
বিএনপির তালিকা অনুযায়ী বহিষ্কৃত নেতারা হলেন:
পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ময়দান দিঘী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিব আল আমিন, দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, সৈয়দপুর (সাংগঠনিক জেলা) যুগ্ম সম্পাদক রিয়াদ আরফান সরকার, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সদস্য রিয়াজুল ইসলাম, নাটোরের লালপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি আরিফ, বাঘাতিপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জুলফিকার আলী, দিঘলিয়ায় খুলনা জেলা বিএনপির সাবেক সহশ্রমবিষয়ক সম্পাদক মো. এনামুল হক, খুলনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির আহমেদ, বরগুনা সদরে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য খন্দকার লেয়াকত হোসেন, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য মাহবুবুর রহমান, ময়মনসিংহ সদর থানা কৃষক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হোসাইন নূর মোহাম্মদ আনির, নকলায় শেরপুর জেলা বিএনপির সদস্য মোকসেদুল হক, ধর্মপাশায় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আবুল কাশেম, বিশ্বম্ভরপুরে উপজেলা বিএনপির সদস্য হারুনুর রশিদ ও সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মোহন মিয়া, জামালগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল হক আফিন্দি, গোয়াইনঘাটে সিলেট জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম, হবিগঞ্জে নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুর রহমান, কক্সবাজারের পেকুয়ায় উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি শাফায়েত আজিজ, বান্দরবানের লামায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জাকের হোসেন মজুমদার ও চাঁদপুরে হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান।