তীব্র গরমে সারাদেশে জনজীবন অতিষ্ঠ। গরমের তীব্রতা কমাতে দেশব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে চলছে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। তবে এর মধ্যেই কুষ্টিয়ায় প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বন বিভাগ।
ইতিমেধ্য টেন্ডার (দরপত্র) উন্মুক্তকরণসহ গাছে গাছে করা হয়েছে নাম্বারিং। বিধি মোতাবেক গাছ কাটার আয়োজন চলছে বলে বন বিভাগের কর্মকর্তরা দাবি করলেও এতে স্থানীয়দের রয়েছে জোর আপত্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীপাড়া থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত পাউবোর জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। ১০ বছর আগে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সমিতির মাধ্যমে কয়েক হাজার ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করে বনবিভাগ।
এসব গাছের দশ বছর পূর্ণ হওয়ায় প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটার জন্য উপজেলা পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির সুপারিশ ও জেলা পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির অনুমোদনক্রমে গত ৩ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করে বনবিভাগ। দরপত্রে ২১৭টি লটের মধ্যে ১৪৫টি সরকার নির্ধারিত রেটে আওতায় পড়েছে। প্রতিটি লটে গাছ রয়েছে ১৫০/২০০টি। বাকি লটগুলো নির্ধারিত রেটের নিচে দর দেওয়ায় সেগুলো পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হবে।
এর আগে ২০২৩ সালে যদুবয়রা থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। চলতি বছরেও ওই সড়কের লাহিনীপাড়া থেকে বাঁধবাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৩ হাজার গাছ কাটা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জিকে খালের লাহিনীপাড়া এলাকায় সড়কের ধারে আর সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর নেই। কাটা গাছগুলোর গোড়া ও কিছু অংশবিশেষ পড়ে আছে। চাঁপড়া বোর্ড অফিস এলাকার খালের পাকা ও কাঁচা সড়কের দুপাশে মেহগনি, বাবলা, কড়ইসহ নানান জাতের কয়েক হাজার বড় বড় গাছ রয়েছে। সেগুলোর গায়ে নম্বর বসানো।
এদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য গাছগুলো না কেটে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি ও পথচারীরা। তাদের দাবি, নির্বিচারে গাছ কাটার কারণেই প্রকৃতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গাছপালা কমে যাওয়ার কারণেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে না, তীব্র তাপদাহ চলছে। তিন মাস আগেও সড়কের ধারে গাছগুলো ছিল চোখের সৌন্দর্য। বড় পুকুরের ওখানে ছায়াতলে মানুষ বিশ্রাম নিত। আরামে চলাচল করত পথচারীরা। এখন সেখানে ধু-ধু মরুভূমি, তীব্র দাবদাহ। অল্প কিছু টাকার জন্য সরকার যেন আর গাছ না কাটে।
এ বিষয়ে স্থানীয় চাপড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হক মঞ্জু বলেন, আমি গাছ কাটার সম্পূর্ণ বিপক্ষে। তবে যথাযথ বিধিমালা অনুসরণ করেই গাছ কাটার আয়োজন চলছে বলে বন কর্মকর্তারা জানিয়েছে।
লালন একাডেমির সাবেক নির্বাচিত সদস্য ও সামাজিক সংগঠনের নেতা মো. আলতাফ হোসেন মোল্লা জানান, প্রচণ্ড তাপদাহের সংকটময় এই মূহুর্তে গাছ কাটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ বিশুদ্ধ বাতাস-সুশীতল ছায়া দানকারি গাছগুলো এই মুহুর্তে না কাটতে তিনি জোর দাবি জানান।
কুষ্টিয়া সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ জানান, সরাকারি বিধমালা অনুসরণ করেই টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ কাটার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি বলে বলে তার দাবি। এছাড়া সরকারি রাজস্ব আদায়ে টার্গেটের ১৭৫ কোটির টাকার মধ্যে ৯০ কোটি সামাজিক বন বিভাগের আওতায় গাছ বিক্রিত টাকায় অর্জিত হয়েছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, দেশের ভৌগোলিক সীমানার ২৫ ভাগ বনভূমির প্রয়োজনের তুলনায় রয়েছে মাত্র ৯ ভাগ। যত্রতত্র বেআইনিভাবে গাছ কাটায় প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাবসহ ঘটছে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়। তবে ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়রা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ পথচারীদের সুশীতল ছায়া দানকারী গাছগুলো না কাটতে ঘোর আপত্তি তুলেছেন।