বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভারতের চাপে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আত্মগোপন করেছিলেন- এমন ধারণা নাকচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (৮ এপ্রিল) রাতে ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস প্রসঙ্গে এমন প্রশ্ন উঠলে জবাব দেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি নয়াদিল্লিতে সব বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের দিকে নজর রাখিনি। পিটার হাস প্রসঙ্গে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, না। এটি সঠিক তথ্য নয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ শে মার্চ দিল্লির থিংক ট্যাংক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে এক অনুষ্ঠানে এই অভিযোগ করেছিলেন ঢাকাস্থ ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী।
নিজের লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে পিনাক রঞ্জন বলেন, আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি ভারতের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া বার্তা জানিয়ে দেয়া হয়। যার পরিণতিতে পিটার হাস লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। এর আগে আমরা দেখেছি, পিটার হাস কখনো অমুক বিএনপি নেতাকে বাড়িতে ডেকে আনছিলেন বা বিএনপি নেতাদের বাসায় গিয়ে হাজির হচ্ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনকালে কোথায় যে গা ঢাকা দিলেন তা তিনি নিজেই জানেন। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রিও বক্তব্য রাখেন।
গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ বলা যায় কিনা, এমন একটি প্রশ্নের জবাবে পিনাক বলেন, কোনো দল যদি নিজেদের সিদ্ধান্তে নির্বাচনে না অংশ নেয়, তাহলে তার জন্য বিজয়ী দলকে দোষারোপ করা সাজে না।
পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, আমাদের ভারতেও হামেশাই দেখা যায় যে, দল জানে তারা ভোটে হারবে, তারা অনেক আগে থেকে বলতে শুরু করে ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটযন্ত্র) কারচুপি করা হচ্ছে। কাজেই তাদের অজুহাতের অভাব হয় না।
অনুষ্ঠানে অন্যতম আলোচক, সাবেক ভারতীয় কূটনীতিবিদ ও ঢাকায় সাবেক হাইকমিশনার বিনা সিক্রি বলেন, তার মূল্যায়ন হলো যুক্তরাষ্ট্র আসলে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীকে একটি ‘মডারেট’ (মধ্যপন্থি) ইসলামপন্থি দল হিসেবে বিবেচনা করে এবং তাদের কোনো ধারণাই নেই যে, জামায়াতের চিন্তা-চেতনা ও কর্মকাণ্ড কতটা উগ্রবাদী। বিনা সিক্রি মনে করেন, এই ‘ভুল ধারণা’র ভিত্তিতেই জামায়াত ও তাদের রাজনৈতিক সঙ্গী বিএনপি আমেরিকার কাছ থেকে প্রশ্রয় পেয়ে আসছে।
এই প্রসঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রও আসলে জানে জামায়াতের প্রকৃত রূপটা কী। কিন্তু সেই একাত্তর থেকে আওয়ামী লীগের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যে বিদ্বেষমূলক একটা মনোভাব ছিল, তার প্রতিফলন আজও রয়ে গেছে। এ কারণেই ওয়াশিংটন আজ অর্ধশতাব্দী বাদেও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের তোল্লাই দিয়ে যাচ্ছে।
সেদিনের আলোচনায় আরো অংশ নেন বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক।